আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্য সংযোজন করের (মূসক তথা ভ্যাট) আওতা বাড়ছে। সে অনুযায়ী দেশি কিছু শিল্পপণ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপের চিন্তাভাবনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ। অন্যদিকে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ছোট ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের বোঝাও কমতে পারে। আবার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে গেলে ভ্যাটে রেয়াতও মিলবে, জরিমানার পরিমাণও কমবে। এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য আগামী বাজেটে সুখবর আসতে পারে। দেশের প্রায় ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর লেনদেনের ওপর এখন ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসে। এই হার কমিয়ে দেড় থেকে দুই শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। কারণ, এসব খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ে তুলনামূলক কম পরিমাণে মূল্য সংযোজন হয়।
কর অবকাশ–সুবিধা পায় এমন কিছু শিল্পকারখানার উৎপাদন পর্যায়ে এবার ভ্যাট বসতে পারে। এই হার হতে পারে ৫ শতাংশ। জানা গেছে, এলইডি টেলিভিশন, বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ, এসি, মোবাইল ফোন—এসব পণ্য যেসব প্রতিষ্ঠান বানায় তাদের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট দিয়ে তবেই তা বাজারজাত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে পণ্যগুলোর দাম বাড়তে পারে।
এ ছাড়া গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যেও উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসতে পারে। এ তালিকায় ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডিং মেশিন, ফ্যান, ইলেকট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেন হুড, কিচেন নাইভসসহ বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি পণ্য থাকতে পারে।
এসব পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে দেশীয় মূল্য সংযোজন করতে হয়। এই মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে তারা ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন হারে আয়কর রেয়াত পায়। এসব শিল্পের পণ্যও ভ্যাট রেয়াতের আওতায় থাকে। এখন উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর। বর্তমানে ৩০টি খাত কর অবকাশ–সুবিধা পায়।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব খাতে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে যাচ্ছি। তাই কিছু রাজস্ব আসা উচিত।’
বর্তমানে ভ্যাট নিয়ে প্রায় ১৩ হাজার মামলার বিপরীতে ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো আটকে আছে। এসব মামলা বিভিন্ন আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এসব ভ্যাটসংক্রান্ত মামলার জট কমাতে বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা থাকতে পারে আগামী বাজেটে। ব্যবসায়ীরা যাতে এসব মামলা আদালতে নিষ্পত্তি না করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে (এডিআর) মীমাংসা করেন, সে জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে। এডিআরের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১০-২০ শতাংশ হারে ভ্যাট রেয়াত দেওয়ার ঘোষণা থাকতে পারে বাজেটে। এতে ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের বোঝা কিছুটা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার জন্য জরিমানার যে বিধান, তাতে পরিবর্তন আসতে পারে। এখন ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়লে যত টাকার ভ্যাট হয়, তত টাকা জরিমানা দিতে হয়। আগামী বাজেটে এই জরিমানার পরিমাণ অর্ধেক করার ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে উপজেলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও আসতে পারে। কারণ, বর্তমানে উপজেলা পর্যায়েও নানা ধরনের ডিপার্টমেন্ট স্টোর ও অভিজাত বিপণিবিতান আছে।