বহুদিন ধরে টাকা জমিয়ে একটা সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলেন আসিফ আহমেদ। তবে কিছুদিনের মধ্যেই বের হতে থাকল গাড়ির নানা সমস্যা। ঠিক করাতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন আসিফ। বিভিন্ন গ্যারেজে বিভিন্ন দাম বলে, কাজের মান কেমন হবে, সেই সম্পর্কেও নেই কোনো ধারণা। বুঝতেই পারছেন না কোন গ্যারেজ ঠিক কথা বলছে, কোথায় কাজটা করাবেন। আর যেসব পার্টস লাগাবেন, সেগুলো এক নম্বর কি না, তার নিশ্চয়তাই–বা কে দেবে? এমন সমস্যায় আসিফ সাহায্য নেন প্রযুক্তির। ‘যান্ত্রিক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে সমাধান পান তিনি।
যান্ত্রিক কী
যান্ত্রিক একটি প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ, যারা মূলত অটোমোবাইল–বিষয়ক সেবা দিয়ে থাকে। যান্ত্রিকের পার্টনার গ্যারেজ আছে, যেগুলো থেকে সুনির্দিষ্ট মূল্যতালিকা অনুযায়ী মানসম্পন্ন কাজের গ্যারান্টি পাওয়া যায়। আবার গ্যারেজে না গিয়ে বাসাতেও সার্ভিস নেওয়া সম্ভব, যান্ত্রিক অ্যাপের মাধ্যমে। তা ছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তেই গাড়ি নষ্ট হোক না কেন, সহজে সমাধান মেলে। সারা দেশে দুই হাজারের বেশি গ্যারেজ নিয়ে আছে যান্ত্রিকের নেটওয়ার্ক। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও রয়েছে যান্ত্রিকের ‘ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট’ সিস্টেম, যেটি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো সারা বছর কম খরচে গাড়িগুলো পরিচালনা করতে পারে।
যেভাবে শুরু
যান্ত্রিকের উদ্যোক্তা হলেন আল ফারুক এবং সহউদ্যোক্তা বিপ্লব বিশ্বাস। কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। বললেন, দুজনেই প্রায় একই সঙ্গে দুটি পুরোনো গাড়ি কিনে ব্যবহার শুরু করেন, দুজনে একই গ্যারেজ থেকে কাজ করাতেন। মেরামতের কাজ করাতে গিয়ে দেখেন বাংলাদেশের গাড়ি মেরামতের খাত খুবই অগোছালো, এখানে মূল্য, সেবা এবং সেবা পরবর্তী ওয়ারেন্টির কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। রাস্তায় গাড়ির কোনো সমস্যা হলে জরুরি সাহায্য পাওয়ারও উপায় নেই। তাই ন্যায্য মূল্যে মান সম্পন্ন সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত তাঁরা মোবাইল ভিত্তিক এই সেবা চালু করেন।
যান্ত্রিকের উদ্যোক্তারাদীর্ঘদিন কাজ করেছেন দেশি এবং বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তাঁরা দেখেছেন, সারা বছরের বিভিন্ন ধরনের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সেন্ট্রাল কোনো সিস্টেম নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম যেমন লাগে, তেমনি স্বচ্ছতার অভাব থাকায় খরচও অনেক বেশি হয়। তাই সাধারণ গ্রাহকদের জন্য অ্যাপ তৈরির পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তাঁরা তৈরি করেছেন ‘যান্ত্রিক ফ্লিট’।
যান্ত্রিকের সেবা
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১০টি বাছাই করা গ্যারেজকে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে ‘যান্ত্রিক গ্যারেজ’ হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেই গ্যারেজগুলোতে একটি নির্দিষ্ট মূল্য তালিকার ভিত্তিতেই গাড়ির সমস্ত ধরনের কাজ করা হয়। এ কারণে খরচ কত হবে সেটি নিয়ে কোনো হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গ্যারেজগুলোতে যান্ত্রিকের একজন ইঞ্জিনিয়ার থাকেন যিনি গ্রাহকদের পক্ষ হয়ে নিশ্চিত করেন যে, কাজের মান এবং সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি কাজের শেষে এক বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়।
যান্ত্রিক অ্যাপ
অ্যাপের (Zantrik) মাধ্যমে সারা বছর গাড়ির নিয়মিত কাজের (ইন্স্যুরেন্স, ফিটনেস, ক্লিনিং, রেগুলার সার্ভিসিং, এমনকি ড্যামেজ কভারেজ সহ) একটা ক্যালেন্ডার বানিয়ে রাখা যায়। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, যান্ত্রিক থেকেই রিমাইন্ডার দিয়ে সেই কাজটি করে দেওয়া হয়। অ্যাপটি পাওয়া যাবে এখানে https://play. google. com/store/apps/details? id=com. sa. zantri
যান্ত্রিক ফ্লিট
‘যান্ত্রিক ফ্লিট’ (https://fleet. zantrik. com/) এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বচ্ছ উপায়ে সারা বছর গাড়ি মেইনট্যানেন্স এর যাবতীয় কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারবে। এ কারণে খরচ যেমন কমে আসবে, তেমনি বিপুল সময় ও পরিশ্রম বেঁচে যাবে। গাড়ি, ড্রাইভার, রুট, স্টেশন, সবকিছুর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে।
যান্ত্রিকের উদ্যোক্তারা জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই সিস্টেমটি তৈরি করতে। এই ধরনের অ্যাডভান্সড সিস্টেম দেশে এই প্রথম। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সিস্টেমটি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়ার মাধ্যমে এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।