কোভিডের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ২০২০ সালে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করে। কিন্তু দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো এই প্রণোদনার সুবিধা পেলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত পিছিয়ে আছে।
আজ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের জরিপের ফলাফল প্রকাশ নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। উপস্থাপনার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের প্রণোদনা পাওয়ার পথ সহজ করতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়নি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সেলিম রায়হান বলেন, বড় ও সংগঠিত খাতের সংগঠন শক্তিশালী। তারা সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারে। সে জন্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে থাকে। সংগঠিত হওয়া নিশ্চয়ই খারাপ কিছু নয়, তবে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করা সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত অতটা সংগঠিত নয় বলে সুযোগ-সুবিধা আদায়ে পিছিয়ে থাকে—এটাই রাজনৈতিক-অর্থনীতি।
সরকার কোভিডের শুরুতেই বড় একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। তার আকারও নিতান্ত তুচ্ছ নয়—জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু সেটাও বিতরণ করা যাচ্ছে না। ব্যাংক যে কাগজপত্র চায়, সেটা তারা অনেক ক্ষেত্রেই দিতে পারে না, তবে সেখানে বড় বা সংগঠিত খাতের সংগঠনগুলো বাগড়া দিতে আসে না।
সেলিম রায়হান মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকা দরকার হলেও সে রকম কিছু দেখা যায়নি। তবে উন্নত দেশগুলোর ক্ষুদ্র-মাঝারি ও অসংগঠিত খাতগুলো সরকারের অনেক সমর্থন পেয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ শতাংশের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা ঋণ পেয়েছে। আর প্রণোদনা যারা পেয়েছে, তাদের ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের হার প্রণোদনা যারা পায়নি, তাদের চেয়ে বেশি। সানেমের জরিপ অনুসারে, প্রণোদনা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের হার ৭১ শতাংশ, আর প্রণোদনা না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুদ্ধারের হার ৫৮ শতাংশ।
দেশের আটটি বিভাগের ৩৮টি জেলার মোট ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। কোভিড শুরুর পর থেকে ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস নিয়ে সানেম মোট সাতটি জরিপ করেছে। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ প্রস্তুতকারক, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। সেবা খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, আইসিটি, টেলিযোগাযোগ, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারির ৩ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও অমিক্রন সংক্রমণের ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় ব্যবসার উন্নতি হয়েছে। তবে কোভিডের নতুন ধাক্কার কারণে সামনের তিন মাস নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশা তুলনামূলক কম। অন্যদিকে সার্বিকভাবে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হয়েছে।