কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের দুগ্ধশিল্প? নানা খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এই পথে দুগ্ধশিল্পের অবদান অন্যতম। বাংলাদেশিরা দৈনিক জনপ্রতি মাত্র ১৫০ মিলিলিটার (মিলি) দুধ পান করে, যা প্রতিবেশী দেশ ভারত (২২৭ মিলি) ও পাকিস্তানের (৫২০ মিলি) তুলনায় অনেক কম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সংখ্যা দৈনিক ৮০ মিলি থেকে বেড়ে আজকের পর্যায়ে এসেছে। প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন চাহিদা। সেই চাহিদার অনুপাতে জোগান দিতে সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন অসংখ্য দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশুদ্ধ দুধের জোগান দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের দুগ্ধশিল্পকে, গড়ে তুলছেন এর ভবিষ্যৎ। খামারিরা তাঁদের উৎপাদিত দুধ পৌঁছে দেন বাজারের প্রধান বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।
শুধু বিশুদ্ধ দুধ সরবরাহ করাই নয়, বরং দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও দুগ্ধশিল্পের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। দেশের প্রায় ৫৮ হাজার ৫৯০টি (২০১৮ সালের হিসাব) ফার্ম থেকে দুগ্ধ উৎপাদনের কাজে সম্পৃক্ত আছেন লক্ষাধিক দেশীয় খামারি। বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার পথে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাই দুগ্ধশিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। নিজস্ব প্রচেষ্টা থেকেই দেশের উন্নয়নের পথে অবদান রেখে চলেছেন দেশীয় দুগ্ধখামারিরা। শুধু নিজেদের বেকারত্ব মোচনই নয়, বরং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং দেশীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে এসব দুগ্ধখামারি বিভিন্ন স্তরে কাজ করে যাচ্ছেন অক্লান্তভাবে। প্রাণ ডেইরির এক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, প্রাণের সঙ্গে থাকা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ৩০ হাজার খামারির মধ্যে ১২ হাজার রেজিস্টার্ড খামারি প্রাণ ডেইরিকে প্রতিদিনই দুধ সরবরাহ করেন। দেশের উত্তরাঞ্চলের পাবনা, নাটোর, রংপুর ও সিরাজগঞ্জে প্রাণের রয়েছে পাঁচটি ডেইরি হাব। প্রতিটি হাবের আওতায় রয়েছে কমপক্ষে ২০টি করে ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার। খামারিরা এসব সেন্টারে এসে দুধ দিয়ে যান। সেখানে প্রাণের প্রশিক্ষিত ডেইরিকর্মী দুধের বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন, যা কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাঠানো হয় ডেইরি হাবে। মান নিয়ন্ত্রণের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা ও পশু চিকিৎসকরাও। পরবর্তী সময়ে এই দুধ নেওয়া হয় নরসিংদীর ফ্যাক্টরিতে। প্রসেসিংয়ের পর সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
এ রকম কঠোর ও বহুমুখী প্রক্রিয়ার কারণে একদম শুরু থেকেই দুধ সংগ্রহের পদ্ধতি থাকে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকৃত। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমিক মান নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া নিশ্চয়তা দেয় বিশুদ্ধতার। আর এই সবকিছুর মূলেই আছেন আমাদের খামারিরা। তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণেই সম্ভব হয়েছে এ রকম স্তরভিত্তিক মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বাস্তবায়ন। তাই সারা দেশে ডেইরি পণ্যের জোগানে ও দেশের দুগ্ধশিল্পের উত্তরণের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে খামারিদের হাত ধরেই।