নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া বাজারে ঢুকলেই ক্রেতা-বিক্রেতার ভোগান্তির শেষ থাকে না। বাজারের রাস্তাঘাটগুলো খানাখন্দে ভরে আছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও শৌচাগার নেই। অথচ বাজারটির ইজারা থেকে প্রতিবছর আসে দুই কোটি টাকার বেশি রাজস্ব। ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী বার্ষিক আয়ের ১৫ শতাংশ হাটবাজারের উন্নয়নে ব্যয়ের নিয়ম থাকলেও উপজেলা প্রশাসন তা মানছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার চন্দননগর ইউনিয়নের ছাতড়া বাজার। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার এখানে হাট বসে। আর সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে বসে বাজার। রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে এটি নওগাঁ জেলার অন্যতম বড় বাজার। এ বছর তহশিল, বাজার ও পশুর হাট মিলে ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় ছাতড়া বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংস্কারের অভাবে হাটের পাকা রাস্তাগুলো খানাখন্দ হয়ে চলার অযোগ্য হয়ে গেছে। বাজারের প্রধান সড়ক ধরে একটি নালা করা হলেও হাটের অন্যান্য স্থানে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বাজারের পশুর হাটটিতে দুটি গণশৌচাগার করা হলেও তহশিল বাজারের দিকে কোনো গণশৌচাগার নেই। যে দুটি গণশৌচাগার আছে, সেগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী। মাছ-মাংস ও সবজি বিক্রেতাদের জন্য কয়েকটি শেড নির্মাণ করে দেওয়া হলেও সেগুলোতে স্থানসংকুলান না হওয়ায় খোলা জায়গায় বসতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে রোদ-বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের।
বাজারের ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদের অভিযোগ, হাটের ভেতরের সড়কগুলো সংস্কার না হওয়ার পাশাপাশি পানিনিষ্কাশনের কোনো নালা না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। বর্ষার সময় দুর্ভোগের শেষ থাকে না। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ী ডাস্টবিন না থাকায় অনেকেই তা নিজ নিজ দোকানের আশপাশে ফেলে রাখেন।
সবজি বিক্রেতার আনিছার রহমান বলেন, ‘রাস্তার ধারত বসে ব্যবসা করলেও ইজারাদারের লোকজনেক খাজনা দেওয়া লাগে নিয়মিতই। কিন্তু হামাগের ভাগ্যের কোনো উন্নতি নেই। রোদ-বৃষ্টি মাথায় লিয়া ব্যবসা করা লাগে। রাস্তায় কাদাপানি থাকলে ক্রেতারা আসতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে তখন কম দামে জিনিস বেচা লাগে।’
ছাতড়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘বছরে দুই কোটি টাকার বেশি আয় হয় এই বাজার থেকে। কিন্তু হাটের কোনো উন্নয়ন হয় না। বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একাধিকবার বলেও কোনো লাভ হয়নি।’
চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, একটি হাটের ইজারার মাত্র ৫ শতাংশ বরাদ্দ পায় ইউনিয়ন পরিষদ। এ টাকা দিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ বলেন, ছাতড়া বাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়া ছাতড়া-মহাদেবপুর সড়কের আট কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হবে শিগগির। এতে বাজারের প্রধান সড়কের প্রায় ৪০০ মিটার রাস্তা সংস্কার করা হবে। তবে বাজারের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কারের জন্য আপাতত কোনো প্রকল্প নেই। আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে।
নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, ‘আমি সদ্য এই উপজেলায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। তবে খোঁজ নিয়ে ওই বাজারের সমস্যা থাকলে শিগগির অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজের ব্যবস্থা করা হবে।’