>বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতির জন্য ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে কাজ করছে। তবে এবার উন্নতি মাত্র এক ধাপ। এ বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ।
প্রথম আলো: এবারের সহজে ব্যবসা সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি মাত্র এক ধাপ। আপনার মূল্যায়ন কী? আমরা কি আরও এগোতে পারতাম?
কাজী মো. আমিনুল ইসলাম: আমাদের আরও অগ্রগতির সুযোগ ছিল। আমরা যে ধরনের কার্যক্রম নিয়েছি, একই ধরনের কার্যক্রম নিয়ে ভারত দুই বছরে ৫৩ ধাপ এগিয়েছে। উন্নতির জন্য যা যা দরকার, তা আমরা চিহ্নিত করেছি। আপনি জানেন, সহজে ব্যবসা সূচকে ১০টি বিষয় আছে। এসব বিষয়ে উন্নতির জন্য যেসব কাজ করতে হবে, তা বেশির ভাগই বিডার বাইরে অন্যান্য সংস্থার কাজের সঙ্গে যুক্ত। যেমন কোম্পানি খুলতে শুরুতে যেতে হবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ে। সেখানে যে ফি বা মাশুল নেওয়া হয়, তা অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এটা কমাতে হবে। ২০১৬ সালে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আইন সংস্কার করার জন্য মাননীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে উদ্যোগ নেবেন।
প্রথম আলো: একটা প্রশ্ন করে নিই। ১০টি বিষয়ে উন্নতির জন্য কী কী প্রস্তুতি আপনারা নিয়েছেন?
কাজী আমিন: প্রতিটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এটা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে সঙ্গে নিয়েই। বিষয়টা এমন নয় যে আমরা একতরফা কাজ করেছি। কার কী দায়িত্ব, তা-ও চিহ্নিত করা হয়েছে। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের মাসিক সমন্বয় সভায় সহজে ব্যবসার জন্য সংস্কারগুলোর অগ্রগতি আলোচনা করবে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতেও এটির প্রতিফলন থাকবে।
প্রথম আলো: সংস্কার হয়েছে, এমন কয়েকটি বিষয় উদাহরণ হিসেবে আপনি কি তুলে ধরবেন?
কাজী আমিন: বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, তারা ২৮ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিচ্ছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ৬০ দিনের মধ্যে নির্মাণকাজের অনুমতি দেবে। আপনি জানেন, প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নটাকেই বড় সমস্যা হিসেবে মনে করা হয়। তেমনি এখানেও
একই সমস্যা। ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রীদের এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা দরকার। ভারতে কিন্তু অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখছেন।
প্রথম আলো: ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির জন্য সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আমলারা সহযোগিতা করছেন কি না, এটা কি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে?
কাজী আমিন: আমলাতন্ত্র একটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজ করতে অভ্যস্ত। আমলাতন্ত্রের সংস্কার সব সময় চলমান থাকে। দেশ অনেক এগিয়েছে, সরকারের রাজনৈতিক অংশ অনেক অগ্রসরমাণ। তবে সরকারের মেশিনারি বা যন্ত্রের গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন দরকার। সরকারের কাজ অনেক বেড়েছে। আমি মনে করি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানো দরকার। পরিবর্তনশীল বিশ্বে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দক্ষ লোক দরকার।
প্রথম আলো: ২০০৮ সালে ডুয়িং বিজনেসে আমরা ১১৫তম ছিলাম। এখন ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। দেশে কি ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কঠিন হয়েছে?
কাজী আমিন: না। বাংলাদেশে ব্যবসা করা দুরূহ হয়েছে, এটা আমি বলব। তবে অন্যরা অনেক এগিয়ে গেছে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পর বিদেশি বিনিয়োগ টানতে বিভিন্ন ব্যবসা সহজ করার ব্যাপক কার্যক্রম নিয়েছে। ফলে তারা এগিয়ে গেছে।
প্রথম আলো: আমরা তো জানি আমাদের কী কী কাজ করতে হবে।
কাজী আমিন: একেবারে পরিষ্কার।
প্রথম আলো: তাহলে সমস্যা কোথায়?
কাজী আমিন: সমস্যা বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রী যে রূপকল্প বা ভিশন ঠিক করেছেন, তা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মপরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এটা যতক্ষণ না হবে, বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই।
প্রথম আলো: আপনি পাঁচটি মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের নাম বলুন, যারা সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে ভালো কাজ করছে।
কাজী আমিন: আমি একটার নাম বলি। বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ খুব উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন।
প্রথম আলো: এখানে একটা বিষয় থেকে যায়। আপনি যদি সেবা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনেন, তাহলে দুর্নীতি কমবে। তাহলে ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে কি দুর্নীতি বড় বাধা?
কাজী আমিন: দুর্নীতি অবশ্যই বাধা। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আপনি জানেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়ার কথা বলেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে।
প্রথম আলো: বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একত্র করে বিডা গঠন করা হয়েছে। আমি যত দূর জানি, এখানে গুটি কয়েক লোক যথাযথ কাজ করেন, বাকিরা করেন না। আপনি কি আপনার কার্যালয় নিয়ে সন্তুষ্ট?
কাজী আমিন: মোটেও না। বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া সাধারণ সরকারি কাজ নয়। ভিন্নমাত্রার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট মেধাসম্পন্ন, দক্ষ ও যোগ্য লোক তৈরি করা দরকার। এ জন্য প্রতিষ্ঠানে প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকতে হয়।