অর্থবছরের ১১ মাস

করোনায় ভ্রমণকরে ধস

করোনায় বিদেশগামী যাত্রী কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ভ্রমণকর আদায় হয়েছে সোয়া ৩০০ কোটি টাকা।

বিমান
প্রতীকী ছবি

করোনার সময় বিদেশ ভ্রমণ নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ না হলেও ঢাকা থেকে বেশির ভাগ গন্তব্যে বিমান উড়ছে না। সীমিত পরিসরে কিছু বিমান চলাচল সচল রাখা হয়েছে। এখন বিদেশ থেকে যাত্রী আনলেও ঢাকা থেকে দেশি–বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করছে না। এক বছর ধরেই এমন অবস্থা চলছে।

করোনার কারণে বহু দেশ বাংলাদেশ থেকে যাত্রী প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ছাড়া স্থলপথে ভারতের সঙ্গে এখন যাত্রী চলাচল প্রায় বন্ধ আছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ভারতীয় পর্যটন ভিসা বন্ধ আছে। এসব কারণে ভ্রমণকর আদায়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত (১১ মাসে) মাত্র সোয়া তিন শ কোটি টাকা ভ্রমণকর আদায় হয়েছে। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরের (জুলাই-মে) একই সময়ে, অর্থাৎ করোনার আগের ওই সময়ে ৮২০ কোটি টাকা ভ্রমণকর আদায় হয়েছিল। করোনার কারণে ভ্রমণকর কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে ভ্রমণকর বাবদ ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল এনবিআরের। অথচ ১১ মাসে লক্ষ্যের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আদায় হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে জুন মাসে বিদেশ ভ্রমণ আরও কমেছে। তাই বলা চলে, বছর শেষে ভ্রমণকরের লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব।

এবার দেখা যাক, বিমান সংস্থাগুলো কীভাবে ভুগছে। বেসরকারি খাতের অন্যতম বড় বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনস। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার আগে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতি সপ্তাহে ৪৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এখন তা নেমে এসেছে ৮টিতে। সেখানেও বিপত্তি আছে। দোহা-মাসকটে সপ্তাহে এক-দুটি ফ্লাইট চললেও শুধু একমুখী যাত্রী পাওয়া যায়। করোনার কারণে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশ থেকে ওই দুটি গন্তব্যে যাত্রী নিচ্ছে না ইউএস–বাংলা। চীনের গুয়াংজুতে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চলছে। সেখানে বাংলাদেশি যাত্রী মিলছে না। শুধু চীন এবং ওই অঞ্চলের যাত্রী পরিবহন করছে বিমান সংস্থাটি।

ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার আগের তুলনায় আন্তর্জাতিক পথে ৮০ শতাংশের মতো যাত্রী কমেছে। ফলে সরকারের করের পরিমাণও কমেছে। করোনার কারণে পর্যটন ও বিমান সংস্থাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একই অবস্থা রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ বিমানেরও। লন্ডন, রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম ও দোহা—পাঁচটি আন্তর্জাতিক পথে সপ্তাহে দুই-তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে সংস্থাটি। সব মিলিয়ে সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট চলে।

এই খাতের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার আগে বিমানবন্দর দিয়ে যত যাত্রী চলাচল করতেন, সেই সময়ের চেয়ে এখন ৭৫ শতাংশ যাত্রী কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিবছর ৬০ লাখের মতো যাত্রী চলাচল করেন। তাঁদের সবাইকে টিকিট কেনার সময় ভ্রমণকর দিতে হয়।

বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বেশি যাত্রী যাচ্ছেন। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দীর্ঘ যাত্রায় যাত্রী নেই বললেই চলে। তিনি জানান, এমিরেটস ও ইতিহাদের মতো বিমান সংস্থা ঢাকায় যাত্রী আনছে। কিন্তু ঢাকা থেকে যাত্রী নিতে পারছে না। ফিরে যাওয়ার সময় শুধু পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে। কবে আবার স্বাভাবিক যাত্রী পরিবহন হবে, তা অনিশ্চিত। যত দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করা যাবে, তত দ্রুত বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা উঠবে।

বিমানবন্দর ছাড়াও স্থল সীমান্ত দিয়ে প্রতিবছর ভারত, নেপাল ও ভুটান ভ্রমণ করতেন কয়েক লাখ পর্যটক। তাঁদেরও সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় ভ্রমণকর দিতে হতো। করোনার কারণে ভারত পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এখন ভারতে পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করা যাচ্ছে না।

বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ৮০০ টাকা ভ্রমণকর দিতে হয়। অন্য দেশে যাতায়াতে ভ্রমণকরের পরিমাণ ১ হাজার ৮০০ টাকা। টিকিটের সঙ্গে এই টাকা কেটে রাখা হয়। স্থলপথের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা এবং জলপথে তা ৮০০ টাকা। ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী যাত্রীদের ক্ষেত্রে এই ভ্রমণকর অর্ধেক। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সী যাত্রী, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী, অন্ধ ব্যক্তি, বাংলাদেশি ও বিদেশি কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবার, পাইলট ও ক্রুদের ভ্রমণকর দিতে হয় না।