>বাতিলের পাশাপাশি ২০ কারখানার ১৩ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিতাদেশ দিয়েছে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক দিন ধরে তৈরি পোশাকের অনেক চলমান ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশ আসছিল। তাই এ শিল্পের উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছিলেন, স্থগিতাদেশের পরের ধাপে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্য হলো। ২০টি পোশাক কারখানার ১ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ১৪৬ কোটি টাকা সমমূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয় গতকাল মঙ্গলবার চার ঘণ্টার ব্যবধানে এই কারখানাগুলোর কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিলের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছে। অবশ্য কেবল বাতিল নয়, পাশাপাশি কারখানাগুলোর ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গ্যাপ, নাইকি, ইন্ডিটেক্স, কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার, রিফোরমেশনের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দেশে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ২২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বিটপী গ্রুপের ৪ লাখ ৬৬ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। বাতিল ও স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়েছে অ্যাপেক্স হোল্ডিংসের ৪০ লাখ পিস পোশাক। আমান গ্রাফিকস অ্যান্ড ডিজাইনের ১ লাখ ১৩ হাজার ডলার মূল্যের ৩৯ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। আমান নিটিংয়ের ১ লাখ ৯৭ হাজার ডলারের ৪৪ হাজার ৭২৬ পিসের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। স্কাইলাইন গার্মেন্টসের ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। রুমানা ফ্যাশনের ৯০ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে দুই ক্রেতা।
জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক গতকাল বলেন, প্রতিনিয়ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের খবর আসছে। নতুন ক্রয়াদেশের বিষয়ে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ। কারখানাগুলোকে নতুন ক্রয়াদেশ এখন দেবে না। ক্রয়াদেশের আগের পরিকল্পনা নিয়ে তারা নতুন করে ভাবছে।
রুবানা হক বলেন, ‘ক্রেতাদের বিবেক কোথায়? মানবাধিকারের কথা বলে তাঁরা আমাদের সব সময়ই চাপ দেন। তখন তাঁরা আর কিছু চিন্তা করেন না। করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের সময় তাঁরা শুধু ব্যবসার কথা ভাবছেন। শ্রমিকদের কথা একদণ্ড চিন্তা করছেন না। এটা তো হতে পারে না। এভাবে যদি ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হতে থাকে, তাহলে পোশাকশিল্পের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলতে পারছি না। সামনে ঈদ। ফলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে।’
পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, পোশাকের চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করার তালিকায় রয়েছে বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে সিঅ্যান্ডএ, জারা, পুল অ্যান্ড বেয়ার, বেবি শপ, ব্ল্যাকবেরি, প্রাইমার্ক উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনে এমন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এইচঅ্যান্ডএম। সুইডেনভিত্তিক এই খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জিয়াউর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চলমান ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করিনি। তবে সামনের দিনগুলোতে যেসব ক্রয়াদেশ দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে আমরা পরিবর্তন আনছি। পরিমাণ কমাচ্ছি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ব্র্যান্ডগুলোর আউটলেটে বিক্রি নেই।’
জিয়াউর রহমান বলেন, সপ্তাহ দুয়েক ধরে ইউরোপে করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। চীনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, মাস দুয়েকের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না–ও হতে পারে। সেটি হলে পোশাক রপ্তানিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এই বিপর্যয় কাটাতে হলে সরকার, ব্র্যান্ড, বিজিএমইএ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।