দেশে চালু হতে যাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) টেলিযোগাযোগ সেবার ন্যূনতম গতি ২০ এমবিপিএস নির্ধারণ করেছে সরকার। এই গতিকে অবাস্তব অভিহিত করে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ২০ এমবিপিএস (মেগা বিট প্রতি সেকেন্ড) গতির ফোর–জি সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
ফোর–জি সেবার মান নির্ধারণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর আগে যে নীতিমালা তৈরি করেছিল সেখানে ফোর–জির ন্যূনতম গতি ধরা হয়েছিল ১০০ এমবিপিএস। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে তা কমিয়ে পরে ২০ এমবিপিএস নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি।
২০ এমবিপিএস গতির ফোর–জি সেবা দিতে না পারার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। এর মধ্যে প্রথমেই আছে তরঙ্গের স্বল্পতা। তাদের মতে, বর্তমানে দেশের চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রত্যেকের কাছে যত তরঙ্গ আছে তার সব ব্যবহার করেও এই গতির ফোর–জি দেওয়া সম্ভব নয়। নিজস্ব ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক না থাকার কারণেও এ গতির ফোর–জি দেওয়া কঠিন। এ ছাড়া বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মানের কারণেও এই গতির ফোর–জি গ্রাহক পর্যায়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি তরঙ্গ আছে রবি আজিয়াটার। বিভিন্ন ব্যান্ডে রবির মোট তরঙ্গের পরিমাণ এখন ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ। গ্রামীণফোনের ৩২ মেগাহার্টজ, টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ ও বাংলালিংকের কাছে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে। তাদের মতে, ২০ এমবিপিএস ন্যূনতম গতির ফোর–জি সেবা দিতে হলে তাদের তরঙ্গ দরকার কমপক্ষে ৬০ মেগাহার্টজ। কিন্তু এত তরঙ্গ ব্যবহারের সুযোগ বর্তমানে নেই।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ফোর–জি প্রযুক্তির গড় গতি ১৬ দশমিক ৬ এমবিপিএস। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ফোর–জির গড় গতি বর্তমানে ৬ দশমিক ১৩ এমবিপিএস। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশে ফোর–জির গতি ৯ থেকে ১৪ এমবিপিএসের মধ্যে। ফোর–জি গতিতে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দুটি দেশ হলো সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। সিঙ্গাপুরে এখন ফোর–জির গড় গতি ৪৬ দশমিক ৬৪ এমবিপিএস, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৫ দশমিক ৮৫ এমবিপিএস। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, এই দুটি দেশ ছাড়া ৪০ এমবিপিএসের বেশি গতি পাওয়া যায় নরওয়ে ও হাঙ্গেরিতে। এ দুটি দেশে ফোর–জির গড় গতি ৪২ এমবিপিএস। বিশ্বজুড়ে ৩৮ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ৫ হাজার কোটি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে একেকটি দেশের ফোর–জি ইন্টারনেটের গতি নির্ধারণ করে ওপেন সিগন্যাল।
জানতে চাইলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ফোর–জি প্রযুক্তির যে ন্যূনতম গতি সরকার নির্ধারণ করেছে, সেটি বাস্তবসম্মত নয়। এটি পরিবর্তনের জন্য অপারেটররা সরকারকে অনুরোধ করেছে।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান বলেন, বর্তমানে বিটিআরসি যেসব ইন্টারনেট প্যাকেজের অনুমোদন দেয় সেগুলোর সবই ইন্টারনেট ডেটার পরিমাণভিত্তিক। সব ইন্টারনেট প্যাকেজকে গতিভিত্তিক করে তারপর বিটিআরসি ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি বেঁধে দিতে পারে। সবদিক বিবেচনায় ২০ এমবিপিএসের ফোর–জি গতি বাংলাদেশে নিশ্চিত করা অসম্ভব।
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে যেকোনো শ্রেণির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি ৫ এমবিপিএস। তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ইন্টারনেটকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে দেশে থ্রিজি প্রযুক্তির গড় গতি কত সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বিটিআরসির কাছে নেই।