পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া দেশীয় ইলেকট্রনিকস কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন গ্রহণ রোববার (৯ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে। এ আবেদন গ্রহণ চলবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত।
একটি বিও অ্যাকাউন্টের বিপরীতে সর্বোচ্চ এক লটের জন্য আবেদন করা যাবে। ওয়ালটনের আইপিওর প্রতি লটে থাকছে ২০টি করে শেয়ার। আর প্রতি শেয়ারের দাম ২৫২ টাকা। সে হিসাবে ৫ হাজার ৪০ টাকায় ওয়ালটনের আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট লোকজনের মতে, দীর্ঘদিন পরে পুঁজিবাজারে ওয়ালটন হাই-টেকের মতো একটি ভালো কোম্পানির আইপিও আসছে শুনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) খুবই ভালো অবস্থানে। এসব দিক বিবেচনায় পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নজর এখন ওয়ালটন হাই-টেকের আইপিওর দিকে। ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো লভ্যাংশ পাবেন, এমন প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ওয়ালটন হাই-টেকের ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা ও এনএভি ২৪৩.১৬ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অর্থবছরের প্রকাশিত ইপিএস বিবেচনায় ওয়ালটন অষ্টম স্থানে রয়েছে। এমনকি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খ্যাতনামা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চেয়েও ওয়ালটনের ইপিএস বেশি। এদিকে এনএভি বিবেচনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে আছে ওয়ালটন। আর তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটনের স্থান দ্বিতীয়।
প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের চিফ বিজনেস অপারেশন (সিবিও) কাজী আহসান হাবিব বলেন, ‘ওয়ালটনের ইপিএস ও এনএভি খুবই আকর্ষণীয়। সার্বিক বিবেচনায় ওয়ালটন নিঃসন্দেহে একটি ভালো স্টক। তাই কোম্পানিটির সাবস্ক্রিপশন খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ালটনের মতো একটি বৃহৎ কোম্পানি ক্যাপিটাল মার্কেটে আসার সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। এ ধরনের কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার কারণে ক্যাপিটাল মার্কেটের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনালের বিনিয়োগকারী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রায় সাত মাস পুঁজিবাজারে আইপিও আসা বন্ধ আছে। গত কয়েক বছরে যেসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এসেছে, তাদের অধিকাংশই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। ফলে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এমন পরিস্থিতিতে ওয়ালটনের মতো ভালো ও মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবার আশা জাগিয়েছে। আমার মতো অনেক বিনিয়োগকারী ওয়ালটন আইপিওতে আবেদন করার জন্য হাতে টাকা নিয়ে বসে রয়েছেন। ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো ক্যাপিটাল গেইন করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।’
এর আগে চলতি বছরের ২৩ জুন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৭২৯তম কমিশন সভায় ওয়ালটন হাই-টেককে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৯৫ টাকা সংগ্রহ করবে। সংগৃহীত টাকা থেকে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণ, ৩৩ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ ও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও পরিচালনা বাবদ ব্যয় করবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
দেশে সর্বপ্রথম ডাচ পদ্ধতিতে গত ২ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ওয়ালটনের নিলাম (বিডিং) শেষে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩১৫ টাকা। আইন অনুসারে, কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে (ডিসকাউন্ট) আইপিওতে শেয়ার ইস্যুর বিধান থাকলেও সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থ এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে ২০ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার ২৫২ টাকায় ইস্যু করছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
ওয়ালটন হাই-টেকের ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।