গত মাসে ৪১৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় গত বছরের জুলাইয়ে।
করোনা মহামারির মধ্যেই পণ্য রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড দেখল বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উদ্যোক্তারা মোট ৪১৭ কোটি ডলার বা ৩৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন। অতীতে আর কোনো মাসেই এই পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়নি। এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
পণ্য রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। গত মাসে এই খাত থেকে ৩৪২ কোটি ডলার বা ২৯ হাজার ৭০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা বলেন, এটিই পোশাক খাতের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি।
গত মাসে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানির ফলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ১০২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। চলতি বছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল ও রাসায়নিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট পণ্য রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৯০৫ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের ৮১৩ কোটি ডলারের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ বেশি।
আলোচ্য তিন মাসে ৫১৬ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে ৩৯০ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বিপুলসংখ্যক মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তাই সেসব দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের জন্য করোনার আগের মতোই ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। তা ছাড়া মিয়ানমারে সেনাশাসন ও ভারতে করোনার ভয়াবহতার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়। তার আগে থেকেই কিছু ক্রয়াদেশ চীন থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করেন ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা। ভিয়েতনামে লম্বা সময় লকডাউন থাকার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ এসেছে। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি ক্রয়াদেশ এসেছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম অবশ্য বলেন, কনটেইনার-জটের কারণে আগস্ট মাসের অনেক পণ্যই সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে। সে কারণে রপ্তানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, কাঁচামাল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ওভেন পোশাক কারখানার মালিকেরা। কারণ, বিদ্যুৎ-সংকটের জন্য কয়েক দিন ধরেই চীনারা কাপড় সরবরাহ করতে পারছেন না। উদ্যোক্তারা তো ক্রয়াদেশ নিয়ে বসে আছেন। সময়মতো কাঁচামাল না এলে রপ্তানিতে ছন্দপতন ঘটবে। কারণ, ওভেন কাপড়ের ৬০ শতাংশ চীন থেকে আসে।
অন্যদিকে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানাগুলোতে প্রচুর ক্রয়াদেশ রয়েছে। সে জন্য আগের চেয়ে দামও কিছুটা বেশি নিতে পারছেন উদ্যোক্তারা। আশা করছি আগামী মাসগুলোতে নিট পোশাক রপ্তানিতে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।’ তবে সুতার দামের অস্থিরতার কারণে রপ্তানিকারকেরা খুব একটা স্বস্তিতে নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সহসভাপতি ছৈয়দ মো. শোয়াইব হাছান বলেন, প্রচুর ক্রয়াদেশ থাকলেও রপ্তানি কমছে। জাহাজভাড়া ৩-৪ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। চিনি, ময়দা, গম, আটা ও তেলের মতো কাঁচামালের দামও বেড়েছে। প্যাকেজিং উপকরণের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
শোয়াইব হাছান আরও বলেন, বর্তমানে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। এর ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আছে ১০ শতাংশ। আবার পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ। আপাতত নগদ সহায়তার ওপর এআইটি ও উৎসে করহার কমানো হলে উদ্যোক্তারা কিছুটা সুবিধা পাবেন।