ভোজ্যতেল কোম্পানি

ঋণ শোধে সরকারের দ্বারস্থ সেনা এডিবল

  • সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে এক বছর আগে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। বর্তমানে এই দর ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা।

  • পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক বছর আগে ছিল ৬৪০ থেকে ৬৮০ টাকা, যা বর্তমানে ৯৭৫ থেকে এক হাজার টাকা।

ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানি সেনা এডিবল অয়েল ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এলেও এখন তা পরিশোধ করতে পারছে না। তাই ঋণ পরিশোধের বিষয়ে সুবিধা চেয়ে কোম্পানিটি সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছে।

সেনাকল্যাণ সংস্থার সহযোগী এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার অনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, সেনা এডিবল অয়েলের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশিদ উল আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সেনা এডিবল অয়েলকে সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অনিষ্পন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

আসল টাকা তো আর মওকুফ করা যাবে না। সুদ নিয়ে কী করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে যা করার পূবালী ব্যাংক ও ইডকলের পরিচালনা পর্ষদই করবে।
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেনা এডিবল অয়েল সরকারকে জানিয়েছে যে ভোজ্যতেলের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ (মনোপলি) প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বাজারের অস্থিতিশীলতা রোধ করতে সেনাকল্যাণ সংস্থা সেনা এডিবল অয়েল প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠাকালে কোম্পানিটি ৫৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, যার মধ্যে ৩৪০ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ। এর মধ্যে বেসরকারি পূবালী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি টাকা এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে ২০০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। সুদাসলে তা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৩৪ কোটি টাকা।

সেনা এডিবল অয়েল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আরও জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি এবং বর্তমানে ঋণের অর্থ পরিশোধ করা তাদের জন্য দুরূহ।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গত সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসল টাকা তো আর মওকুফ করা যাবে না। সুদ নিয়ে কী করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে যা করার পূবালী ব্যাংক ও ইডকলের পরিচালনা পর্ষদই করবে।’

পূবালী ব্যাংক ও ইডকলে ৪৩৪ কোটি টাকা দেনা সেনা এডিবল অয়েলের। এই ঋণ পরিশোধ করা দুরূহ বলে সরকারকে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

সেনা এডিবল অয়েলের অন্যতম পণ্য হচ্ছে সেনা ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল। তাদের ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত। ২০১৮ সালের জুনে স্থাপিত এই কারখানার দৈনিক তেল পরিশোধন সক্ষমতা শুরুর দিকে ছিল এক হাজার টন, যা বর্তমানে ৫০০ টন।

যোগাযোগ করা হলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল আলম খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁদের ঋণটি পুনঃ তফসিল করা আছে। কিস্তি আসছে, ফলে ঋণটি নিয়মিত। যতটুকু জানি, ঋণ পরিশোধের জন্যই সেনা এডিবল অয়েল সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।’

পূবালী ব্যাংকের চেয়েও ইডকলের দেওয়া ঋণের পরিমাণ বেশি। ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও নির্বাহী পরিচালক মো. আলমগীর মোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সেনা এডিবল অয়েলকে দেওয়া ঋণ ও তার আদায় কার্যক্রম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন কোম্পানিটির পর্ষদ চেয়ারম্যান। পর্ষদে আরও রয়েছেন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বিদ্যুৎসচিব হাবিবুর রহমানসহ আরও আটজন।

সেনা এডিবল অয়েলের সেনা, টি কে গ্রুপের পুষ্টি, সিটি গ্রুপের তীর, এস আলম গ্রুপের এস আলম, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ইত্যাদি হচ্ছে দেশের জনপ্রিয় ভোজ্যতেলের ব্র্যান্ড।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে এক বছর আগে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। বর্তমানে এই দর ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক বছর আগে ছিল ৬৪০ থেকে ৬৮০ টাকা, যা বর্তমানে ৯৭৫ থেকে এক হাজার টাকা।

সয়াবিনের মূল্য এত বৃদ্ধির পরও ঋণ পরিশোধে কেন সরকারের দ্বারস্থ হতে হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে সেনা এডিবল অয়েলের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশিদ উল আলম মুঠোফোনে মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের স্বার্থেই সেনা এডিবল অয়েলের প্রতিষ্ঠা। গত রমজানেও টিসিবিকে তিন হাজার টন সয়াবিন তেল দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। এ জন্যই সমস্যা হয়েছে।’

রশিদ উল আলম আরও জানান, সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক থেকে চূড়ান্ত কোনো সুপারিশ আসেনি। আবারও বৈঠকের দরকার পড়বে।