চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে দেশে দেশে বিশেষ করে বিপজ্জনক ও একেঘেয়ে কাজে শিল্প-রোবটের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের তরুণ প্রকৌশলীরা নানা ধরনের রোবট উদ্ভাবন করে চলেছেন। তাঁদেরই একজন ঢাকায় বেড়ে ওঠা প্রকৌশলী আরিয়ান কবির। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস কাজের নতুন ও বিকাশমান প্রতিষ্ঠান গ্রে ম্যাটার রোবোটিকসের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সম্প্রতি তাঁদের প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ডলার (২০০ কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগ পেয়েছে। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মুনির হাসান
প্রথম আলো: তড়িৎ প্রকৌশলে পড়াশোনা করে রোবোটিকসে আগ্রহ হলো কেমন করে?
আরিয়ান কবির: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) পড়াশোনা করার সময় থেকেই রোবোটিকস নিয়ে আমার মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। তখন বিভিন্ন ধরনের রোবোটিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। তা ছাড়া আমি স্নাতক শেষ করার সময় একটি ড্রোন নিয়ে থিসিস করেছিলাম। একটি ড্রোন বানিয়ে চালিয়েছিলাম। এভাবেই আমাদের দৈনন্দিন জীবন অর্থবহ করে তুলবে, এমন রোবট নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বাড়ে, যা বাসাবাড়ির কাজ থেকে শুরু করে মানুষের জন্য কঠিন ও বিপজ্জনক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুধু করতেই পারবে না; বরং সিদ্ধান্তও নিতে পারবে। তা ছাড়া রোবটের যন্ত্রপাতি অনেক ম্যাচিউর। মানুষ বছরের পর বছর ধরে এসব বানিয়ে আসছে। কিন্তু রোবটের এখনো নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। এসব চিন্তাভাবনা থেকে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগ বিষয়ে আমি পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজখবর করি। সে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে চলে যাই। সেখানে একটি শক্তিশালী রোবোটিকস প্রোগ্রাম আছে। ২০১৪ সালে সেখানে যোগ দিই।
বুয়েটে মাস্টার্স শেষ করেছিলেন?
আরিয়ান কবির: না। আমি সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে চলে গিয়েছি। সেখানেই আমার বর্তমান কোম্পানি গ্রে ম্যাটার রোবোটিকসের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ও আমার অধ্যাপকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৯ সালে আমার পিএইচডি প্রোগ্রাম শেষ হয়।
পিএইচডিতে কোন বিষয়ে কাজ করেছেন?
আরিয়ান কবির: পিএইচডি প্রোগ্রামে ফোকাস ছিল বিভিন্ন রোবোটিকস সিস্টেমকে অটোনোমাস (স্বয়ংক্রিয়) করা। বিভিন্ন প্ল্যানিং ও লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে জটিল পরিবেশে কীভাবে উচ্চমাত্রার রোবোটিকস সিস্টেম দিয়ে অর্থবহ কিছু করানো যায়, সেটিই ছিল আমার উদ্দেশ্য। সে ক্ষেত্রে অনেক তাত্ত্বিক বিষয় আছে, সেগুলোকে প্রয়োগ করার জন্য সারফেস স্মুথনেসের স্যান্ডিং, পলিশিং কাজে ব্যবহার করতাম। তা ছাড়া বিভিন্ন কম্পোজিট শিট সঁচিত করা, রোবোটিক অ্যাসেম্বলি, রোবোটিক থ্রিডি প্রিন্টিং এসব নিয়েও কাজ করতে হয়েছে। ২০১৬ সালে আমার অধ্যাপক নতুন সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পরিচালক হয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান। তখন আমার মনে হলো, আমিও তাঁর সঙ্গে নতুন সেন্টারে চলে গেলে একসঙ্গে একই ল্যাবে কাজ করতে পারব। এ সময় মেরিল্যান্ডে আমার সহপ্রতিষ্ঠাতার পিএইচডিও প্রায় শেষের দিকে ছিল। তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে আমাদের কাছে চলে আসে এবং রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করে।
সেখানে ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে উৎপাদন নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয় আমাদের। ওই সেন্টারে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন উৎপাদনকারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। বড় ও মাঝারি দুই ধরনের শিল্পের উদ্যোক্তারাই আসতেন। তাঁরা আমাদের জানাতেন তাঁদের কী সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বড় অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান, যারা মাল্টি মিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টার ব্লেড তৈরি করে। আমাদের জানায়, তারা দামি এই ব্লেড এখনো হাতে বানায়! কিন্তু তাদের সেই কাজে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্যান্ডিং, পলিশিং, পেইন্টিং করার জন্য মানুষ প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন। এদিকে তাঁরা সমস্যায় পড়ে যাচ্ছেন। কারণ, ওই সময়ে একদিকে জ্যেষ্ঠ কর্মীরা অবসর নিচ্ছিলেন, অন্যদিকে তরুণেরা এ কাজে আসছিলেন না। তরুণেরা সাধারণত দুই সপ্তাহ কিংবা দুই মাস করার পর তা ছেড়ে দিয়ে চলে যান। এতে কোম্পানিটি শ্রমিকসংকটে পড়ে।
ওই কোস্পানির অনেক চাহিদা থাকলেও বড় পরিসরে কাজ করার আগ্রহ যেন হারিয়ে ফেলেছে। অথচ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের টাকা–পয়সার কোনো অভাব নেই। আমরা তাদের রোবট ব্যবহারের পরামর্শ দিলাম। কিন্তু দেখা গেল, টেসলা বা টয়োটা যেভাবে রোবট ব্যবহার করে, তারা সেভাবে করতে পারছে না। কারণ, টেসলা ও টয়োটার রোবটগুলোকে একবার প্রোগ্রাম করে দেওয়া হলে সেগুলো বারবার একই কাজ করতে পারে। এটা খুবই ভালো, অসাধারণ। কিন্তু আমরা জানলাম, প্রায় ৯৮ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো সবকিছু হাতে করা হয়। হাতে করার কারণ হলো, কাজের বিভিন্ন বৈচিত্র্য ও পার্থক্য। যেমন, একটি বিশ্বখ্যাত মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট কোম্পানি প্রতিবছর সহস্রাধিক গিটার তৈরি করে। সব গিটারই হাতে তৈরি করা হয়। কারণ, প্রতিটা যন্ত্রাংশেরই পার্ট টু পার্ট ভ্যারিয়েশন ও ভ্যারিয়েবিলিটি আছে। মানুষের চোখে যদিও দেখতে দুটি গিটার একই রকম লাগে, কিন্তু বাস্তবে ময়েশ্চার কনটেন্ট কিংবা বিভিন্ন ফিজিকস ফ্যাক্টরের কারণে প্রতিটি গিটারের বডিতে কয়েক মিলিমিটার পার্থক্য আছে।
আর যদি জিনিসটা হেলিকপ্টারের ব্লেড হয়, সেগুলোতে সেন্টিমিটারের বেশি পার্থক্য থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা যা ব্যবহার করি, তার মধ্যে হেলমেট, সার্ফ বোর্ড, বাথ টাব, সিংক, স্যানিটারি উপকরণ—এগুলো হাতেই মসৃণ করা হয়। এসব কাজ আমেরিকা, ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতেও হাতে করা হয়। ফলে যাঁরা এসব কাজে যুক্ত, তাঁরা বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকেন। দুই থেকে পাঁচ বছর কাজ করার পর কর্মীদের কাঁধে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
একদিকে শ্রমিকের অভাব, অন্যদিকে যাঁরা আছেন তাঁদের জীবন অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এসব শুধু ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি উৎপাদনশিল্পেই নয়, বরং বাস, অ্যাম্বুলেন্স, বড় বড় নন–অটোমেটিভ ট্রান্সপোর্টেশন, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন, সারফেস ভেহিকেলস-বোট, সাবমেরিন, জাহাজ, ডিফেন্স এয়ারক্র্যাফটের ক্ষেত্রেও ঘটে। অবশ্য প্রতিটি যন্ত্রপাতি হাতে বানানোর কারণে ভেরিয়েশন তৈরি হয়। এসব কাজ যদি রোবটের মাধ্যমে করা হয়, তাহলে সমস্যা দূর হতো। তারপরও কিছু সমস্যা সামনে চলে আসে। যেমন আলাদা আলাদা কাজের জন্য প্রতিটি রোবটকে প্রোগ্রাম করে দেওয়া হয়। একই রোবটকে ম্যানুয়ালি প্রোগ্রাম করতে ২০০ থেকে ১০০০ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই ৯৮ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে রোবট ব্যবহার হয় না। আমাদের এখন লক্ষ্য হলো, ক্লান্তিকর ও বিপজ্জনক কাজ, যেমন ম্যানুফ্যাকচারিং পরিবেশে সারফেস ফিনিশিং অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট কাজকে স্বয়ংক্রিয় করা। আমেরিকায় ৯ হাজারের মতো রোবট আছে, যা দিয়ে এ কাজ করা হয়। পাশাপাশি ১৫ লাখ শ্রমিক কাজটি হাতে করেন। আমরা সেখানে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
শুরুটা কী ওই সেন্টারেই হলো?
আরিয়ান কবির: পিএইচডি প্রোগ্রাম শেষ করার পর ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান তহবিল (এনএসএফ) থেকে ৫০ হাজার ডলারের একটা ফান্ড পাই। আমাদের সাত সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। শর্ত ছিল, এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সেখান থেকে চিহ্নিত করতে হবে, তাঁদের সমস্যা কোথায়। আমরা সাত সপ্তাহে ১৫০ গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা চিহ্নিত করি। সেখান থেকেই আমাদের কোম্পানির যাত্রা শুরু। এর আগে ২০১৭ সালে আমরা জার্মানির একটি প্রতিযোগিতায় (কুকা উদ্ভাবন পুরস্কার) ফাইনালিস্ট হয়েছি। সেই সুবাদে জার্মানিভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার সুযোগ পাই। পিএইচডি শেষে কোম্পানি শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই করোনা মহামারি শুরু হয়৷ এতে শ্রমিকের অপ্রতুলতা দেখা দেয়। তখন সব মানুষ চিন্তা করতে শুরু করেন এসব সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়। আমরাও বাজার পাওয়া শুরু করি। শুরুতে একটা অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারী থেকে অল্প কিছু বিনিয়োগ নিয়েছি, যা দিয়ে আমাদের কোম্পানির জন্য একটা রোবট কিনি। এর কিছুদিন পর এনএসএফ থেকে আরেকটা অনুদান পাই। এটা আর অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারীর ফান্ড এক করে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
আমরা প্রথমে যে কাজটা করি সেটা হলো, বাসের যন্ত্রপাতির কাজ করে এমন একজন গ্রাহকের কাছে যাই। যদিও তখনো আমাদের প্রোডাক্ট তৈরি হয়নি। তারা বিভিন্ন কম্পোজিট ফাইবার গ্লাসের কাজ করে। তাঁদের আয়ের ৭৫ শতাংশ শ্রমিক খরচে চলে যায়। তাঁকে বললাম, আমরা একটা রোবট বানাব যেটা নিজে নিজেই প্রোগ্রাম তৈরি করবে। ওই একটা রোবট দিয়েই অনেক কাজ করা যাবে। বুঝালাম, যা কিছু রোবটের সামনে নিয়ে আসা হবে, তা স্ক্যান করে রোবট নিজে নিজেই প্রোগ্রাম তৈরি করবে। অর্থাৎ একই রোবট নিজে নিজেই অনেক কাজ করতে পারবে। কথাগুলো শুনে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
কিন্তু আপনাদের তো তখনো রোবট ছিল না?
আরিয়ান কবীর: হ্যাঁ। আমাদের প্রোডাক্ট বা ট্র্যাক রেকর্ড কোনোটাই ছিল না। গ্রাহক হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ভেবে আমরা তাদের প্রস্তাব দিলাম, রোবট একবারে না কিনেও সেবা হিসেবেও এটা তারা নিতে পারে। বললাম, তুমি আমাদের থেকে একটা রোবট নাও একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক বাবদ। তাকে কোনো প্রশিক্ষণ দিতে হবে না৷ রোবট ম্যাজিকের মতো সব কাজ করবে। তুমি মাসে মাসে বেতন দিয়ে দিবে। তখন সে দেখল, এতে তার কোনো রিস্ক নেই। কাজ না করলে টাকা দিতে হবে না। এরপরে সে রাজি হলো। আমাদের প্রেজেন্টেশন দেখে সে আমাদের সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তি করে।
আপনাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে বলুন।
আরিয়ান কবির: আমরা আপাতত বিভিন্ন সারফেস ফিনিশিং অপারেশনেই আছি। এটা হতে পারে সেন্ডিং, পলিশিং, কোটিং, গ্রাইন্ডিং, পেইন্টিংসহ যেখানে হাত দিয়ে কাজ করা হয়। সেসব কাজের জন্য আমরা বাজার থেকে রোবট কিনে আনি। তারপর সেটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম চালাই। আমরা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সফটওয়্যার কোম্পানি। হার্ডওয়্যারগুলো কিনে এনে সেটির সঙ্গে স্পেসিফিক সেন্সর, টুলস এগুলো যুক্ত করে সেটির জন্য সফটওয়্যার সমাধান তৈরি করি।
গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস কেমন সাড়া পাচ্ছে?
আরিয়ান কবির: আমরা রোবোটিক বিজনেস রিভিউর (আরবিআর) ৫০ উদ্ভাবনী পুরস্কার পেয়েছি। এর মানে হলো, আমরা এখন রোবোটিকস এআই ইনোভেশনের জন্য বিশ্বের সেরা ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। এই পুরস্কার পাওয়াতে আমরা সারা পৃথিবী থেকে সাড়া পেতে শুরু করি।
তা ছাড়া আমরা কিন্ত সেবা হিসেবে রোবোটিকস (RaaS)-এর সেবা দিই। আমাদের গ্রাহক কিন্তু রোবট কিনে নেয় না। আমাদের রোবটগুলো তারা ‘শ্রমিক’ হিসেবে তাদের প্ল্যান্টে ব্যবহার করে। ফলে গ্রাহকদের কিন্তু রোবট কেনার এককালীন খরচ বহন করতে হয় না।
নিজেরা রোবট বানাচ্ছেন না কেন?
আরিয়ান কবির: সেটির তো দরকার নেই। রোবট বানানোর অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। আর অন্যান্য কারখানাগুলোর দরকার ওদের কাজের একটা সমাধান। রোবটটা কে বানাচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। রোবট কাজটা ঠিকভাবে করছে কি না, সেটিই দরকারি। আমরা সেই সলিউশনটাই দিচ্ছি। আমাদের কাজ হচ্ছে, গ্রাহকের সমস্যা বুঝে তাকে একটা সমাধান প্রস্তাব করা। গ্রাহকের সেটা পছন্দ হলে তখন আমরা সমাধানটা করে দিই।
গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস তো দুই কোটি ডলার বিনিয়োগ পেল।
আরিয়ান কবির: জি। আগস্টের মাঝামাঝি আমরা ২০ মিলিয়ন ডলারের সিরিজে বিনিয়োগ পেয়েছি। বিনিয়োগকারীদের নেতৃত্বে আছে বো ক্যাপিটাল ভেঞ্চার। আগের বি ক্যাপিটাল গ্রুপ, ক্যালিব্রেট ভেঞ্চার, ওসিএ ভেঞ্চার, পাথব্রেকার ভেঞ্চার, ত্রি এম ভেঞ্চার এবারও বিনিয়োগ করেছে। নতুন হিসেবে পেয়েছি সুইফট ভেঞ্চার।
এই মুহূর্তে আমাদের কোম্পানিতে ১৫ জন পূর্ণকালীন কর্মী আছেন। এই বিনিয়োগ কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের টিমটা বড় করে ফেলব। পরিসর বড় করতে হলে আমাদের নিজেদের রোবটের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কর্মী বাড়ানোর পাশাপাশি আমরা তাই নতুন কিছু রোবটও সংস্থাপিত করে নেব। এ ছাড়া গবেষণা উন্নয়ন অব্যাহত রাখব।
আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বর্তমানে রোবোটিকস, এআই-এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। তাদের উদ্দেশে কি বলবেন?
আরিয়ান কবির: আমার মনে হয়, সবার আগে যথেষ্ট আগ্রহ থাকা দরকার। আজকাল নিজে নিজেই অনেক কিছু শেখা যায়। ফলে কেউ চাইলে নিজেই নিজেকে প্রশিক্ষিত করতে পারেন। তবে রোবোটিকস নিয়ে কাজ করতে হলে কম্পিউটার বিজ্ঞান, তড়িৎ প্রকৌশল, যন্ত্রকৌশল, গণিত এসবে পারদর্শী হতে হবে। আগামী পাঁচ বছর পরে কী ধরনের চাহিদা তৈরি হবে এসব নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। এখানে শুধু প্রকৌশলীরাই কাজ করবেন তা নয়। সবার জন্যই কাজের সুযোগ আছে। আগ্রহ ও পদক্ষেপ নেওয়াটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। হাল না ছেড়ে লেগে থাকতে হবে। পড়াশোনা করার সময় শিখতে হবে কীভাবে বেশি শেখা যায়।
দেশে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য রোবট অলিম্পিয়াডও কিন্তু হয়।
আরিয়ান কবির: তারা সিমুলেশনে রোবটের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে পারে। কারণ, খুব ভালো হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করা অনেক ব্যয়বহুল। সিমুলেশনে তারা অ্যালগরিদম করবে, রোবট কীভাবে ঘর ঝাড়ু দেবে অথবা সার্জারি করবে সেসব সহজ কাজগুলো করতে শিখবে। এসব কাজে খুব পরিশ্রম করতে হবে না। ঘরে বসেই শিখতে পারবে।
প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। গ্রে ম্যাটার রোবোটিকসের জন্য শুভকামনা।
আরিয়ান কবির: আমাদের কাজগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ। নতুনেরা যদি এগিয়ে আসে তাহলেই এই আলোচনাটা সার্থক হবে। আপনাদেরও ধন্যবাদ।