উদ্যোক্তা হিসেবে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতেন রোকিয়া আফজাল রহমান

নারী উদ্যোক্তা ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। শনিবার রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে
ছবি: প্রথম আলো

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে রোকিয়া আফজাল রহমান সব সময় সাহসিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাতে তিনি সফলও হয়েছেন। সাহসের বাতিঘর হয়ে পাশে থেকেছেন দেশের নারীসমাজের। রোকিয়া আফজাল সব সময় নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এই যুদ্ধে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। আগলে রেখেছিলেন সবাইকে।

রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে গতকাল শনিবার বিকেলে প্রয়াত রোকিয়া আফজাল রহমানের স্মরণসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে সফল এই উদ্যোক্তার আত্মার শান্তি কামনায় সংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

অনুষ্ঠানে রোকিয়া আফজাল রহমানের পুত্রবধূ সানজিদা সুলতানা বলেন, আজীবন নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে গেছেন তিনি। ব্যবসায়ী হিসেবে পরিবারের বাইরে অনেক সময় দিতে হলেও তিনি ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে আপনজন।

সভায় রোকিয়া আফজাল রহমানের সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁর বড় মেয়ে ইরাম মরিয়ম। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট বোনের জন্মের আগে মা ছিলেন পাকিস্তানে। তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। মা কোনোভাবেই চাইলেন না ওখানে তাঁর কোনো শিশু জন্ম দিতে। তাই তিনি দেশে চলে এলেন। দেশপ্রেমী মানুষ ছিলেন তিনি।’

অনুষ্ঠানে রোকিয়া আফজাল রহমানের নাতি-নাতনিরা বলেন, ‘তিনি আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন। আমাদের কথাগুলো আমরা তাঁকে মন খুলে বলতে পারতাম।’

নাতি-নাতনিদের কথার সূত্র ধরে ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘তাঁরা যেভাবে বললেন, তাতে আমি চাইব, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আমারও এমন সম্পর্ক হোক। এভাবে বন্ধুর মতো মিশতে পারাটা কম কথা নয়। ওনার সঙ্গে আমার ২২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তিই প্রকৃত নারী অধিকার।’

অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও তিনি আসলে প্রকৃত একজন মানবতাবাদী মানুষ ছিলেন।

রোকিয়া আফজাল রহমানের প্রতি ভালোবাসা ও প্রাণের টানে অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাঙামাটির নারী উদ্যোক্তা মুঞ্জুলিকা চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমার মতো একজনকে সেই পাহাড় থেকে এনে তিনি শুধু বাংলাদেশে পরিচয় করাননি। আমি ওনার কারণে আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিতি পেয়েছি।’

রোকিয়া আফজাল রহমানের ছোট মেয়ে ফাইজা রহমান বলেন, ‘আম্মুকে দেখেছি সব সময় সবাইকে সহযোগিতা করতে। এসব দেখে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও সেভাবে শিক্ষা নিয়েছে।’

নারী উদ্যোক্তা ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। শনিবার রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রোকিয়া আফজাল রহমানের ছোট জামাতা নেহাল আহমেদ। বক্তব্য দেন তাঁর পুত্র ইমরান ফাইজ রহমান ও জ্যেষ্ঠ জামাতা সৈয়দ কায়সার কবির। নাতি-নাতনিদের মধ্যে সৈয়দ ওমর কবির, আয়ানা মরিয়ম, ইমান আজিম রহমান, আমায়া রহমান, মারিয়ূম আহমেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রোকিয়া আফজাল রহমান গত ৫ এপ্রিল মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেড ও মাইডাস ফাইন্যান্সের চেয়ারপারসন ছিলেন। মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেড থেকে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি তিনি ছিলেন মিডিয়াস্টারের পরিচালক। মিডিয়াস্টার থেকে দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেন তিনি।