বিদ্যমান কোম্পানি আইনে বড় ধরনের বাঁকবদল হচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ঘটছে এক ব্যক্তির কোম্পানি করার সুযোগের ক্ষেত্রে, যা দেশে একবারেই নতুন।
আইনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো, বর্তমানে কোম্পানির নামের শেষে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই সুযোগ আর থাকছে না।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে লিখতে হবে লিমিটেড। আর এক ব্যক্তির কোম্পানির ক্ষেত্রে নামের শেষে লিখতে হবে ওপিসি (ওয়ান পারসন কোম্পানি)।
বিদ্যমান কোম্পানি আইনে বড় ধরনের বাঁকবদল হচ্ছে। আসছে ছোট-বড় কিছু পরিবর্তন। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ঘটছে এক ব্যক্তির কোম্পানি করার সুযোগের ক্ষেত্রে, যা দেশে একবারেই নতুন।
আইনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো, বর্তমানে কোম্পানির নামের শেষে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই সুযোগ আর থাকছে না। যেমন সরকারি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং বেসরকারি সব কোম্পানির নামের শেষেই এত দিন ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ‘লিমিটেড’। ঢালাওভাবে এই শব্দ আর ব্যবহার করা যাবে না।
‘কোম্পানি আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) ২০২০’ শীর্ষক বিল বিশ্লেষণ করে এসব কথা জানা গেছে। বিলটি ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অধিকতর সংশোধনের জন্য আনা হয় এই বিল।
বিলটিতে কোম্পানির ধরন অনুযায়ী নামের শেষে পিএলসি, লিমিটেড ও ওপিসি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এটি হুবহু পাস হলে যেকোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে লিখতে হবে পিএলসি (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি)। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে লিখতে হবে লিমিটেড। আর এক ব্যক্তির কোম্পানির ক্ষেত্রে নামের শেষে লিখতে হবে ওপিসি (ওয়ান পারসন কোম্পানি)।
তবে কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী, মুনাফা অর্জন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত সমিতি এবং ২৯ ধারা অনুযায়ী গ্যারান্টি দ্বারা সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হবে না।
পুরো বিষয় নিয়ে গত সোমবার বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীনের কাছে প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে সোনালী ব্যাংকের পর ‘সোনালী ব্যাংক পিএলসি’ লিখতে হবে কি না বা আইন পাসের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের নামের শেষেও পিএলসি যুক্ত হবে কি না?
জাতীয় সংসদে বিলটি উপস্থাপনের সময় উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এই বিল পাস হলে সহজ ব্যবসায় সূচকে বাংলাদেশের মান বাড়বে। আর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অধিকতর সহজীকরণের জন্য ওপিসি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে এক ব্যক্তির কোম্পানির নামের শেষে ওপিসি থাকবে, তা সবার বোধগম্য। কিন্তু পিএলসি ও লিমিটেড শব্দ বসবে কোন ধরনের কোম্পানির নামের শেষে, এ নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। আইন সংশোধনের বিল তৈরির সঙ্গে যুক্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেও এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া কোন কোন কোম্পানির নামের মাঝখানে ‘প্রাইভেট বা প্রা.’ লিখতে বা লেখা হয়, সে ব্যাপারেও বিলে কিছু বলা নেই।
পুরো বিষয় নিয়ে গত সোমবার বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীনের কাছে প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে সোনালী ব্যাংকের পর ‘সোনালী ব্যাংক পিএলসি’ লিখতে হবে কি না বা আইন পাসের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের নামের শেষেও পিএলসি যুক্ত হবে কি না? ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডও কি ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি হবে? জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘বিলে নির্দেশনা দেওয়া আছে। যে যেভাবে আবেদন করবে, সেভাবেই তার নাম হবে।’
এক ব্যক্তির কোম্পানি (ওপিসি)
এটি নিয়ে কাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। মাঝখানে গত ২০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয় এবং সংসদে পাঠানো বিলে সংযোজন করা হয়।
বলা হয়েছে, একজন প্রাকৃতিক স্বত্বাবিশিষ্ট ব্যক্তি কেবল একটি ওপিসি গঠন করতে পারবেন। ওপিসির স্মারকে একজন মনোনীত ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকতে হবে, যিনি একমাত্র শেয়ারহোল্ডার মারা গেলে বা কোম্পানি পরিচালনায় অসমর্থ হলে ওই ওপিসির শেয়ারহোল্ডার হবেন। কোম্পানির ব্যবস্থাপনার জন্য এতে ব্যবস্থাপক, কোম্পানি সচিব ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে। তবে আরজেএসসির নিবন্ধককে জানিয়ে মনোনীত ব্যক্তি পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে।
ওপিসির পরিশোধিত মূলধন হবে ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকার মধ্যে। আর তা গঠনের আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার বা লেনদেন ২ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা হবে। এর চেয়ে বেশি হলে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যেকোনো ওপিসি প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।
উন্নত দেশে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে পিএলসি লিখতে হয়। ব্যবসা সূচকের উন্নয়ন এবং অধিকতর স্বচ্ছতার জন্যই এটি করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান
আরও কিছু পরিবর্তন
আরও কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে কোম্পানি আইনের সংশোধন প্রস্তাবে। যেমন ১৪ দিনের নোটিশ দিয়ে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার নিয়ম ছিল এত দিন। তা বাড়িয়ে ২১ দিন করার কথা বলা হয়েছে।
কোম্পানি অবলুপ্তির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর পাওনাদারেরা তাঁদের প্রথম সভায় সরকারি অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবেন। এত দিন এই সুযোগ ছিল না।
বিদ্যমান আইনে সরকারি অবসায়কের ক্ষমতা অংশে কোম্পানির পরিসম্পদ জামানত রেখে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের কথা বলা আছে। তা সংশোধন করে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কোম্পানির পরিসম্পদ জামানত রেখে অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয় করা যাবে। কোম্পানি অবসায়নের ক্ষেত্রে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ধারাও সংযোজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া শেয়ার হস্তান্তরকারীর ব্যক্তিগত উপস্থিতির মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর দেওয়ার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, উন্নত দেশে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে পিএলসি লিখতে হয়। ব্যবসা সূচকের উন্নয়ন এবং অধিকতর স্বচ্ছতার জন্যই এটি করা হচ্ছে।
বিল পাস হলে তাঁদের বেক্সিমকো লিমিটেড কি বেক্সিমকো পিএলসি হয়ে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘নিশ্চয়ই’।