ঈদের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে শেষ দিকে বিক্রি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো।
একটি মোটরসাইকেল কোম্পানির হিসাব বলছে, গত বছর এপ্রিলে দেশে ৩৫ হাজারের মতো মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল। এ বছর এপ্রিলের প্রথম ২৮ দিনে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার ইউনিটের বেশি।
ফলে দেখা যাচ্ছে, ঈদ কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অবশ্য এই বিক্রির হিসাব প্রথাগত কোনো বাজার জরিপ নয়। কোম্পানিগুলো বাজারে নিজের অবস্থান বুঝতে হিসাবটি তৈরি করে।
ঈদের বাজারেও (এপ্রিলের হিসাব) বরাবরের মতোই হিস্যার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ, হিরো ও টিভিএস। জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি রয়েছে এর পরের অবস্থানে। বিক্রি বেড়েছে দেশীয় কোম্পানি রানারেরও।
একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ১৫০ বা তার বেশি সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেলের বাজারে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে জাপানি ব্র্যান্ডগুলো।
বাংলাদেশে জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহার পরিবেশক ও ইয়ামাহার কারিগরি সহায়তায় কারখানা করা এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের বাজার অনেক ভালো গেছে। সবার বিক্রি বেড়েছে।
একই কথা বলেন বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) অর্থায়ন ও বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঈদবাজারে প্রথম দিকে বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল না। তবে শেষ দিকে বিক্রি ভালো হয়েছে।
দেশে ২০১৬ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ছিল। তবে করোনাকালে ২০২০ সালে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যায়। ওই বছর মোটরসাইকেল বিক্রি কমেছিল ১১ শতাংশ। অবশ্য ২০২১ সালেই মোটরসাইকেলের বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার মোটরসাইকেল, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ বেশি। শতকরা হিসাবে বিক্রি বাড়ার হার প্রায় ২০ শতাংশ।
২০২১ সালে মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো জানিয়েছিল, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কারখানা বন্ধ থাকা ও জাহাজের কনটেইনার সংকটে তারা মোটরসাইকেল উৎপাদনে যন্ত্রাংশ সংকটে ভুগেছে। এ বছরের শুরুতে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সেটি হলো ব্যয় বেড়ে যাওয়া। কোম্পানিগুলো বলছে, ব্যয় বেড়েছে তিনভাবে—১. ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। ২. লোহা ও কপারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ৩. জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া।
একটি কোম্পানি তাদের একটি মডেলের দাম ধরে ব্যয়ের বিশ্লেষণটি দেখিয়েছিল। তারা বলছে, মোটরসাইকেলটি আমদানিতে তাদের দাম দিতে হয় ৬০০ মার্কিন ডলার।
এখন ঋণপত্র (এলসি) খুলতে প্রতি ডলারের দাম পড়ছে ৯২ টাকার মতো। এতে একটি মোটরসাইকেলে ৩ হাজার ৬০০ টাকা বেশি লাগছে। জাহাজভাড়া হয়েছে দ্বিগুণ।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২০ সালে টনপ্রতি কপারের দাম ছিল ৬ হাজার ডলারের কিছু বেশি। সেটা গত মার্চে ১০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। একইভাবে লোহার দাম টনপ্রতি ১০৯ ডলার থেকে ১৫০ ডলার ছাড়িয়েছে।
বাড়তি দামের কারণে মোটরসাইকেল আমদানিতে বেশি ব্যয় হচ্ছে। এর ওপর করভারও চাপছে বেশি। কারণ, করের হিসাবটি হয় পণ্যমূল্যের ওপর শতকরা হারে।
দেশে সম্পূর্ণ যুক্ত (সিবিইউ) অবস্থায় মোটরসাইকেল আমদানিতে করভার ১৫৩ শতাংশের মতো। বিযুক্ত অবস্থায় আনলে (সিকেডি) মোট করভার দাঁড়ায় প্রায় ১২১ শতাংশ। দেশে তৈরি করলে কর ৩৮ শতাংশ বা তার কম। বেশির ভাগ কোম্পানি কিছু মডেলের মোটরসাইকেল দেশে উৎপাদন করে। কিছু বিযুক্ত অবস্থায় আমদানি করে। কিছু কিছু বেশি দামি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ যুক্ত বা তৈরি অবস্থায় দেশে আসে।
একটি মোটরসাইকেল কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে কোম্পানিগুলো কিছু কিছু মূল্যছাড় দিয়েছে। এটা বাজার ধরে রাখতে। কিন্তু ভেতরে–ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। নানাভাবে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাবটি মোটরসাইকেলের বাজারে পড়বে ঈদের পরে।