করোনাকালের ঈদ

ঈদে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো সামর্থ্যবানদের কর্তব্য

করোনাকাল বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা গেছে থমকে। উৎসবের আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে করোনার থাবায়। তবু ঈদ আসে, আসে উৎসব। অনেকে বড়বেলায় ঈদের আনন্দ খোঁজেন ফেলে আসা ছোটবেলার ঈদে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা। তাই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনা সংকটের মধ্যে তৃতীয় ঈদ উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে কয়েক দিন পর। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, প্রধান নির্বাহী ও ব্যাংকারদের ঈদের একাল-সেকাল নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।

করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধির কারণে গত বছরের মতো এ বছরের ঈদও ঘরে বসে করতে হচ্ছে। পারিবারিক পর্যায়ে কিছুটা উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বড় আয়োজনের চিন্তা এবার নেই। ঈদের পরদিন আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা আর বাইরে খাওয়াদাওয়া ও আড্ডা ছিল ২০২০–এর আগপর্যন্ত ঈদের অন্যতম আকর্ষণ। গতবারের মতো এবারও তা করা সম্ভব হবে না। তবে এতটা সীমিতভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করতে হচ্ছে বলে আমার তেমন আফসোস নেই। কারণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের ও সবার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে, এটাই বাস্তবতা। নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নতুন পথ তৈরি করতে হবে।

কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে শুধু খাবারদাবার নয়, নিজেদের ও উপহারের পোশাক এবং এমনকি জাকাতের কাপড়ও কিনেছি। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেই এসব কিনেছি। গত বছরও এভাবে কেনাকাটা করেছি।

সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অনলাইনেই কেনাকাটা করব বলে ঠিক করেছি। গত এক বছরের বেশি সময় অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেক তরুণ উদ্যোক্তার যেসব পণ্য দেখেছি, তাতে দেশীয় পণ্য ও উদ্যোক্তাদের সৃজনশীলতা ও দক্ষতার ব্যাপারে নতুন করে আশাবাদী হয়েছি। আমরা যদি দেশীয় পণ্য দিয়ে উৎসবগুলো উদ্‌যাপন করি, তাহলে দেশীয় শিল্প সহায়তা পাবে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নতুন অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন, বিশেষ করে অনেক নারী এ সময় অনলাইন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনা করে নারীদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে উৎসাহিত করতে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।

অন্যদিকে ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করলে এই করোনাকালে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব কিন্তু বেড়ে গেছে। ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া জরুরি। আর করোনার কারণে ঈদে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো সামর্থ্যবানদের কর্তব্য।

এই চরম হতাশার সময়ও সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগগুলো আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমরা যারা সরকারি পেশাজীবী, তারা কিন্তু ঈদ বোনাসের টাকা এ ধরনের কাজে ব্যবহার করতে পারি। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সবাই যদি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াই, আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কিছুটা হলেও সহজতর হবে।

পয়লা বৈশাখ, রমজান ও ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে প্রতিবছরই বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। উৎসব ঘিরে যে চাহিদা সৃষ্টি হয়, তাকে কেন্দ্র করে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, যাদের অনেকে আবার গ্রামভিত্তিক, উৎপাদন পরিকল্পনা করে থাকেন—ভিন্নধর্মী চাহিদা কেন্দ্র করেও উৎপাদন হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে মানুষের আয় কমে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে এবং এ বছরের প্রথমে সংক্রমণ কমে আসায় চাহিদার সংকট কমে আসছিল, যা সাম্প্রতিক সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আবার বেড়ে গেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জীবিকার কথা চিন্তা করে দোকানপাট খুলে দেওয়া হলেও অনেকে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এবং অনেকে আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে সীমিত আকারে কেনাকাটা করছেন।