ঈদের কাঁচাবাজারে চাহিদা কম যে কারণে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে ঈদের কাঁচাবাজারেও। বিক্রেতারা বলছেন, কাঁচাবাজারে ‘ঈদপণ্যের’ চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। এর কারণ, মানুষের হাতে টাকা কম।

পবিত্র ঈদুল ফিতরে এমনিতেই গরুর মাংস, মুরগি, ইলিশ মাছ ও চিংড়ি, সুগন্ধি চাল, ঘি, সেমাই, দুধ, গরম মসলা ইত্যাদির চাহিদা বাড়ে। এবার ঢাকায় চাহিদা আরও বেশি হওয়ার কথা। কারণ, বেশির ভাগ মানুষই গ্রামে যেতে পারেনি। সে তুলনায় বাজারে চাপ নেই বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও বলছেন একই কথা।

মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলী কাঁচাবাজারের নাসির গোশত বিতান থেকে দুই কেজি গরুর মাংস কিনে ফিরছিলেন একই এলাকার হার্ডওয়্যার পণ্যের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান খান। তিনি বলেন, দুই মাস ধরে কোনো ব্যবসা নেই। এ ছাড়া বাসায় এবার কোনো অতিথি আসা বারণ। তাই কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

আরিফুর রহমান আরও বলেন, গত বছর ঈদুল ফিতরে ৬ কেজি গরুর মাংস, ৮টি মুরগি ও ২ কেজি খাসির মাংস কিনেছিলেন। এবার খাসি বাদ। মুরগি কিনেছেন দুটি।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ঈদে যে পরিমাণ মাংস বিক্রি হয়, এবার বিক্রি তার চেয়ে অনেক কম।

বাড়তি চাহিদার কারণে প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে গরুর মাংসের দামও অনেকটাই বেড়ে যায়। এবারও বেড়েছে, তবে ততটা নয়। ঢাকার বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ২০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। গরুর মাংসের মতো ঈদে লাফিয়ে বাড়ে ব্রয়লার মুরগির দামও। কিন্তু এবার ঈদ ঘনিয়ে আসতে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলী কাঁচাবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৫৫ টাকা ও কক মুরগি আকার ভেদে কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। দেশি মুরগির দাম রোজা শুরুর আগে কেজি ৫৫০ টাকা ছিল। এখন তা ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

জানতে চাইলে পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিনও জানান, সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে চাহিদা কম। এ কারণে বাজার পড়তি।

>

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বেশিসংখ্যক মানুষ ঢাকায় ঈদ করছে
সে তুলনায় চাহিদা কম
কারণ মানুষের হাতে টাকা কম

বাজারে সুগন্ধি চালের দাম আগে থেকেই চড়া। খোলা চিনিগুঁড়া চালের প্রতি কেজির দাম মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। প্যাকেট ১২০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাইয়ের প্রতি ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৩৫ টাকা, ৪০০ গ্রাম ঘিয়ের কৌটা ৫০০-৫২০ টাকা, প্রতি লিটার তরল দুধ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দুধ, সেমাই, ঘি ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রাণ-আরএফএলের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চাহিদা কিছুটা কম। এ কারণে উৎপাদনও কম।

ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুডের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, রমজান মাসজুড়ে দুধের চাহিদা ৩০ শতাংশ কম ছিল। গত কয়েক দিনে চাহিদা কিছুটা বাড়লেও স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়।

দেশি পেঁয়াজের দর কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আকার ভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। চীনা আদা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর ভারতীয় আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। গরম মসলার দামে নতুন করে কোনো হেরফের নেই।

ঈদে ইলিশ আর চিংড়ি বেশি বিক্রি হয়। তবে দাম বাড়েনি। এক কেজির ইলিশ প্রতিটি ১ হাজার টাকার আশপাশে ও ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মাঝারি গলদা চিংড়ির কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা।

আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম বলেন, উৎসব ভাতা না পেলে উৎসব হয় কী করে।