>জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাতকরণে দুই বছর পার করল এসিআই মোটরস। আজ রোববার তারা তিন বছরে পা দেবে। এই দুই বছর ব্যবসা কেমন গেল ও আগামীর পরিকল্পনা কী, প্রথম আলোকে তা জানিয়েছেন এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ।
প্রথম আলো: দুই বছর আগে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান দেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাজারজাত করত। এরপর একক পরিবেশ হলো এসিআই। বিক্রি কতটুকু বেড়েছে?
সুব্রত রঞ্জন দাস: আমরা এখন বছরে ১৮ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করি। এটা আগের প্রতিষ্ঠানের ঠিক তিন গুণ। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩৫ শতাংশ। আপনি যদি তরুণদের পছন্দের কথা বিবেচনা করেন, তাহলে ইয়ামাহা সবার ওপরে। আমরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জরিপ করে দেখেছি, মোটরসাইকেল চালাতে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে ৯০ শতাংশ তরুণ আর্থিক দিক দিয়ে সক্ষম হলে ইয়ামাহা কিনতে চায়। কারণ, তারা ইয়ামাহা ব্র্যান্ড পছন্দ করে।
প্রথম আলো: তরুণেরা ইয়ামাহা কেন পছন্দ করে, আপনার কী মত?
সুব্রত রঞ্জন: ইয়ামাহা উচ্চপ্রযুক্তির ও সেরা মানের মোটরসাইকেল বিক্রি করে। আমরাই একমাত্র ফুয়েল ইনজেকশন মডেলের মোটরসাইকেল বিক্রি করি। এর সুফল হলো, এটি জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। পাশাপাশি এর পারফরম্যান্স অনেক ভালো। বাংলাদেশের রাস্তায় ব্রেক কষা ও ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি খুবই জরুরি। ইয়ামাহা এই দুই দিক দিয়ে অত্যন্ত ভালো। আর যদি নকশা ও দেখার সৌন্দর্যের কথা বলেন, ইয়ামাহা অনেক আকর্ষণীয়।
প্রথম আলো: পণ্যের মানের পাশাপাশি বিপণন কৌশল কি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
সুব্রত রঞ্জন: ইয়ামাহা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর বাইকারদের সঙ্গে সংযোগ তৈরিতে আমরা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। আমরা আধা ঘণ্টার মধ্যে মেরামত সেবা দিই। এর মানে হলো আমাদের সার্ভিসিং সেন্টারে গেলে আধা ঘণ্টার মধ্যে কেউ না কেউ আপনার মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করবে। ৮০ শতাংশ গ্রাহকের ক্ষেত্রে আমরা সেটা করতে পারি। আমাদের প্রত্যেকটি সার্ভিসিং সেন্টারে কম্পিউটারের সাহায্যে সমস্যা শনাক্ত করার ব্যবস্থা আছে।
প্রথম আলো: আপনি তরুণদের সংযুক্ত করার কথা বলছিলেন।
সুব্রত রঞ্জন: সারা পৃথিবীতে বাইকিং একটি সংস্কৃতি। আমরা সেটা তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমরা তরুণদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সংযুক্ত। বাইকার গ্রুপগুলো ও বর্তমান গ্রাহকদের আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাই। ফেসবুকে আমাদের লাইকের সংখ্যা ১১ লাখ, যা এ খাতে সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাবেশ করে ইয়ামাহার লোগো তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছি। আমরা বাইকারদের প্রশিক্ষণ দিই।
প্রথম আলো: আপনাদের মোটরসাইকেলগুলো ইয়ামাহার কোন দেশের কারখানা থেকে আসে?
সুব্রত রঞ্জন: আমরা মূলত ভারত থেকে বেশি আমদানি করি। এ ছাড়া একটি মডেল ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয়। এটি হলো, ইয়ামাহা আর১৫ভি৩। ভবিষ্যতে আমরা থাইল্যান্ড থেকেও ইয়ামাহার মোটরসাইকেল আনব। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ইয়ামাহার জনপ্রিয় অ্যানম্যাক্স নামের একটি স্কুটার আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে আনছি। জানুয়ারিতে বাজারে পাওয়া যাবে।
প্রথম আলো: আপনারা দেশে এনে মোটরসাইকেল সংযোজন করেন?
সুব্রত রঞ্জন: না, আমরা পুরোপুরি যুক্ত (সিবিইউ) অবস্থায় মোটরসাইকেল নিয়ে আসি। এ কারণে করের হার বেশি পড়ে। আমরা মোট কর দিই ১৫৩ শতাংশ। এ কারণে দাম বেশি। বিযুক্ত অবস্থায় আনলে (সিকেডি) মোট করভার দাঁড়ায় ১২১ শতাংশ। দেশে তৈরি করলে কর ৩৮ শতাংশ।
প্রথম আলো: মোটরসাইকেল সংযোজনে কারখানা করার কথা ছিল এসিআইয়ের।
সুব্রত রঞ্জন: গাজীপুরে ১০ একর জমিতে আমাদের কারখানার কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে দেশে সংযোজিত ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের কিছু মডেল বাজারে ছাড়া যাবে বলে আশা করছি। এরপর জুলাই থেকে আমরা ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের একটি মডেল উৎপাদন শুরু করব, যেখানে বাংলাদেশে তৈরি কথাটি লেখা যাবে। ইয়ামাহা বিশ্বে প্রথমবারের মতো তার কোনো পরিবেশকের সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি করেছে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের বাজার কতটুকু? সম্ভাবনাই বা কেমন?
সুব্রত রঞ্জন: দেশে এখন বছরে ৪ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। সে হিসেবে বাজার অনেক ছোট। এত ছোট বাজারে একটি কোম্পানির পক্ষে কারখানা করা কঠিন। দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহার ১২০ জনে ১টি, ভারতে তা ৩০ জনে ১টি এবং ভিয়েতনামে ৪ জনে ১টি। পাকিস্তানে বছরে ২০ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। অবশ্য এ দেশে মোটরসাইকেলের বাজার দ্রুত বাড়বে। এখন বিক্রির প্রবৃদ্ধি বছরে ৩০ শতাংশের মতো।