ইভ্যালির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

ইভ্যালি
ইভ্যালি

ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো.হাফিজুর রহমান।

মো.হাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু আইন লঙ্ঘন হয়েছে, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব না নিয়ে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেবে। তার আগে কমিটির সুপারিশ বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্যসচিবকে জানানো হবে।

হাফিজুর রহমান বলেন, ১০টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছিল। একটি পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর তথ্যও আসবে। বৈঠকে ধামাকা, ই–অরেঞ্জ ইত্যাদির কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

হাফিজুর রহমান বলেন, তাদের অনেকেও আইন অমান্য করেছে। তবে এই মুহূর্তে শুধু ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাকিদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইভ্যালি টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি গ্রাহককে। এর সম্পদ ও দায়–এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভোক্তার পাশাপাশি মার্চেন্টরাও ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবস্থা নেওয়ার ভিত্তি হচ্ছে এ বিষয়গুলো। ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ কম উঠছে বলেও জানান হাফিজুর রহমান।

হাফিজুর রহমান বলেন, ইভ্যালি টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি গ্রাহককে। এর সম্পদ-দায়েরও পার্থক্য অনেক। ভোক্তার পাশাপাশি মার্চেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবস্থা নেওয়ার ভিত্তি হচ্ছে এ বিষয়গুলো। তবে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ কম উঠছে।

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন হাফিজুর রহমান বলেন, এতে শাস্তির বিষয়ে তেমন কিছু বলা নেই। যেহেতু প্রতারণা হয়েছে, ফলে দণ্ডবিধি আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও আছে। এগুলো দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি স্বীকার করে বলেন, নির্দেশিকাটি আরও আগে হলে মানুষের বঞ্চনা আরও কম হতো। মন্ত্রণালয় এটি আগে করার চেষ্টা করলেও কোভিড-১৯ এর কারণে পিছিয়ে গেছে।

ইভ্যালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া কোনো সহজ কাজ নয়। কোম্পানি যিনি সৃষ্টি করবেন, তিনিই তা বন্ধ করতে পারবেন। এ ছাড়া পারবেন আদালত।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সুপারিশ জনগণের স্বার্থ সুরক্ষায় যথেষ্ট কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সেই নিশ্চয়তা দিতে পারব না। তবে ইভ্যালি বা মার্চেন্টদের চেয়েও গ্রাহকদের প্রতি আমরা বেশি মনোযোগী। যদিও বিনিয়োগ করার সময় তারা কাউকে জিজ্ঞাসা করে বিনিয়োগ করেননি, তার পরও সরকার চেষ্টা করবে গ্রাহকেরা যাতে তাঁদের পাওনা বা পণ্য বুঝে পান। আবার মার্চেন্টরাও যেন তাদের টাকা পান।’

তবে ইভ্যালি যদি অর্থ পাচার করে থাকে এবং সেই অর্থ উদ্ধার করা না যায় তাহলে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি একটু কঠিন হবে বলে মনে করেন হাফিজুর রহমান। বলেন, ‘অপরাধী যাতে শাস্তি পায় সেটা বিবেচনায় আছে আমাদের।’

যদি মামলাই হয়, তাহলে বাদী হবে কে-এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ আইনি ব্যবস্থা বলতে কী বোঝানো হয়েছে জানতে বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে মামলা করাকেই বোঝানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষকদের দিয়ে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, এখানে কিছু আইনি সমস্যা আছে। মন্ত্রণালয় এভাবে নিরীক্ষা করতে পারে কিনা তা যাচাই করে দেখা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও আগে কেন পদক্ষেপ নেয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান প্রথম আলোর নাম উল্লেখ না করে বলেন, দেশের স্বনামধন্য একটি পত্রিকা ইভ্যালি নিয়ে এক বছর আগে প্রথম পৃষ্ঠায় খুব ভালোভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এর পর একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরকারের সাতটি সংস্থাকে চিঠি পাঠায়। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এক মাসের জন্য ইভ্যালির ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে গত মাসে ইভ্যালি যে হিসাব দিয়েছে সে অনুযায়ী গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুধু গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির দেনা ৩১১ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছে দেনা ২০৫ কোটি টাকা।