বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার আনুষ্ঠানিক সময় শেষ হয়ে গেছে গতকাল শুক্রবার। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববারও রিটার্ন গ্রহণ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অফিসগুলো। আপনি যদি এই নির্ধারিত সময়ে কর দিতে না পারেন, তাতে খুব দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আপনি যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে কর অফিস থেকে সময় নিতে পারবেন। আয়কর অধ্যাদেশেই করদাতাদের জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ জন্য নির্ধারিত করের ওপর সুদের পাশাপাশি জরিমানা গুনতে হবে।
কয়েক বছর আগ পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু প্রতিবছর এই সময় একাধিকবার বৃদ্ধি করা হতো। তাই দুই বছর আগে এই সময়সীমা বৃদ্ধির আর সুযোগ না দিয়ে প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা চালু করা হয়। পাশাপাশি যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সময় বৃদ্ধি, করের সুদ ও বিলম্ব ফি দিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরেও রিটার্ন জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এনবিআরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আমরা কর পরিশোধ বা রিটার্ন জমা দেওয়ার পথ বন্ধ করে দিতে চাই না। এ জন্য বিলম্ব সুদ ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ বিলম্ব সুদ বা জরিমানা দিলে পরবর্তী সময়ে তাঁরা সঠিক সময়ে রিটার্ন জমা দেবেন।
এবার আসি আপনি কীভাবে সময় বাড়ানোর সুযোগটি নেবেন। আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারায় সময় বৃদ্ধির বিধানটি রয়েছে। কোনো করদাতা নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট কর কার্যালয়ে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবেন। উপকর কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় বাড়াতে পারবেন। ওই দুই মাসের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ওই করদাতা আবারও সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদন নিয়ে আরও দুই মাস সময় বাড়াতে পারবেন। সব মিলিয়ে একজন করদাতা নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সর্বোচ্চ চার মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারবেন।
তবে সময় বৃদ্ধি করেই আপনি পার পেয়ে যাবেন, তা নয়। আপনাকে অবশ্যই নির্ধারিত করের ওপর সুদ দিতে হবে। আয়কর অধ্যাদেশের ৭৩ (এ) ধারায় এই বিধান রাখা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, করদাতার ওপর যে কর নির্ধারিত হবে, সেই করের ওপরে প্রতি মাসে ২ শতাংশ সরল সুদ বসবে। অর্থাৎ কোনো করদাতার যদি এক লাখ টাকা কর আরোপ হয়, তবে ওই করদাতার সুদের টাকার পরিমাণ হবে ২ হাজার টাকা। ওই করদাতা দুই মাস সময় নিলে ৪ হাজার টাকা সুদ গুনতে হবে।
অন্যদিকে কোনো করদাতা যদি সময় না নেন, তবু তিনি রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওই করদাতাকে বিলম্ব সুদের পাশাপাশি জরিমানাও গুনতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা করার একটি পদ্ধতি আছে এনবিআরের। সেটি হলো আগেরবার আপনি যত টাকা কর দিয়েছেন, তার ১০ শতাংশ কিংবা ৫ হাজার টাকা। এই দুটির মধ্যে যার পরিমাণ বেশি হবে, সেটাই ভিত্তি জরিমানা। এরপর দৈনিক হিসাবে ৫০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।
এ ছাড়া রিটার্ন জমা না দিলে এনবিআর চাইলে ফৌজদারি মামলা করতে পারে। এ জন্য আদালতে মামলা করতে হবে। আদালতই সিদ্ধান্ত দেবেন।
রিটার্নের হিসাব-নিকাশ
এবার আপনি ২০১৭-১৮ আয়বর্ষের কর ও আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দেবেন। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত আপনি যে আয় ও সম্পদ অর্জন করেছেন, তার ওপরই রিটার্ন তৈরি করবেন। গত বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬১৬ জন কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) রিটার্ন জমা দেন। রিটার্ন জমা দিয়ে তাঁরা আয়কর দেন ৪ হাজার ২৮১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এবার এখনো হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। তবে কর মেলায় প্রায় পাঁচ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে। সেখান থেকে কর পাওয়া গেছে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।
রিটার্নের বাইরে
রিটার্নের সঙ্গে আপনাকে গত এক বছরে জীবনযাপনে কত টাকা খরচ করলেন, সেটাও এনবিআরকে বিস্তারিত জানাতে হয়। আপনার আয় বছরে তিন লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলেই আপনাকে নতুন ফরম পূরণ করে জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরতে হবে। সেখানে গৃহকর্মীর বেতনভাতা থেকে শুরু করে ডিশ চ্যানেলের বিলের কথাও উল্লেখ করতে হবে।
জীবনযাত্রার খরচের বাইরে সম্পদের হিসাবও দিতে হবে। রিটার্ন ফরমের পাশাপাশি প্রতিবছর আলাদা একটি সম্পদ বিবরণী ফরমও পূরণ করতে হবে। মোট সম্পদের পরিমাণ যদি ২৫ লাখ টাকার বেশি হয়, তবেই সম্পদ বিবরণী দিতে হবে। তবে গাড়ি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি থাকলে সম্পদের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, সম্পদ বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক।