রপ্তানিমুখী খাত হলেও প্লাস্টিকশিল্পকে উচ্চ হারে করপোরেট কর দিতে হয়। তাই নতুন বাজেটে কর কমানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
দেশের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ঝুড়িতে নতুন করে আশা দেখাচ্ছে প্লাস্টিকের খেলনা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রাখবে প্লাস্টিকের খেলনাসামগ্রী। সে জন্য এই খাতের ওপর থেকে করপোরেট ট্যাক্স তথা কর কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিকের খেলনাশিল্প: রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে এক সম্ভাবনাময় খাত’ শীর্ষক এক সেমিনারে রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা এই দাবি জানান। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন বিশ্বব্যাংকের ইসিফোরজে প্রকল্প যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে।
অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বেশ ভালো। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাতটি খেলনার মেধাস্বত্ব নিবন্ধন (পেটেন্ট) করা হয়। সেটা এখন মোট ২ হাজার ৫৫৮টি।সামিম আহমেদ, সভাপতি, বিপিজিএমইএ
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দেশ থেকে মোট প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ২৯ শতাংশ আয়ই এসেছে খেলনা থেকে। এই সময়ে খেলনা রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। বাংলাদেশের প্লাস্টিক রপ্তানি মোটামুটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে। করোনার মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরেও প্লাস্টিক খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বলছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনা রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) খেলনা রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার, অর্থাৎ গত ছয় বছরে বিশ্ববাজারে খেলনা রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানি হয় স্পেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি ও ফ্রান্স। এই দুই দেশে খেলনা রপ্তানির হিস্যা হচ্ছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। বিল্ডের হিসাব অনুযায়ী প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানিতে ১৬ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি ধরে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ তৈরি খেলনার রপ্তানি বাজার ১৫ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।
গতকাল সেমিনারে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানিমুখী খাত হলেও প্লাস্টিকশিল্পকে উচ্চ হারে করপোরেট কর দিতে হয়। এটা আগামী বাজেটে কমানো প্রয়োজন। সম্ভাবনাময় এ খাত আরও একটু সহযোগিতা পেলে দ্রুত এগিয়ে যাবে। প্লাস্টিক খাতের উপখাত খেলনায়ও বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে। দেশে খেলনার ব্যবহার বেড়েছে। এখন প্রায় আমদানি করতে হয় না। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খেলনা রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। করোনাকালে রপ্তানির গতি একটু কমলেও এবার আবার ভালো করছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, দেশে প্লাস্টিকের খেলনার মতো নতুন নতুন রপ্তানি খাত তৈরি হচ্ছে। এটা আরও বাড়াতে হবে। রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে তৈরি পোশাক ১২ শতাংশ করপোরেট কর দিয়ে থাকে। সে জন্য সরকার অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতেও করপোরেট কর কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও সেটার বাস্তবায়ন দেখা যাবে। হয়তো এখনই সব খাতে ১২ শতাংশ করা হবে না। তবে কমে আসবে।
তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে, এমন পণ্য বানাতে হবে। খেলনাশিল্পের কোয়ালিটি বাড়ানোর পাশাপাশি দামও কমাতে হবে।
বিপিজিএমইএর সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, ‘উদ্যোক্তারা প্রতিটি খেলনায় ভিন্নতা ও নতুনত্ব নিয়ে আসায় অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বেশ ভালো। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাতটি খেলনার মেধাস্বত্ব নিবন্ধন (পেটেন্ট) করা হয়। সেটা এখন মোট ২ হাজার ৫৫৮টি। ২০২২ সালে নিবন্ধন হয়েছে ৭১টি পণ্যের। খেলনা ও ক্রোকারিজ পণ্যের নিবন্ধন বাবদ অদ্যাবধি সরকারি কোষাগারে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেশি জমা পড়েছে।’ তিনি খেলনাশিল্পের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শুভাশিষ বোস, এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ।