দেশীয় অর্থায়নে, দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি পদ্মা সেতু এ দেশের বিভিন্ন খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সেতু প্রকল্পে দেশীয় পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে রড, সিমেন্টসহ আরও অনেক খাতের। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত সিমেন্ট, রড, নির্মাণ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা তাঁদের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রথম আলোকে। কথা বলেছেন সুজয় মহাজন।
পদ্মা সেতু আমাদের মতো অনেক শিল্পোদ্যোক্তার আস্থা বা আত্মবিশ্বাসকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরাও যে বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করতে পারি, তার একটি বড় নজির বা উদাহরণ স্থাপন করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। এ সেতু প্রকল্পে আমরা শুরু থেকে সিমেন্ট সরবরাহ করে আসছি। শুরুতে যখন আমরা এ প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহের জন্য মনোনীত হই, তখন থেকে সিমেন্টের নিয়মিত মান যাচাই শুরু হয়।
পদ্মা সেতুর বিদেশি পরামর্শকেরা আমাদের কারখানায় সার্বক্ষণিক অবস্থান করে এ মান যাচাই কার্যক্রম তদারকি করতে থাকেন। দেশে উৎপাদিত সিমেন্টের মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আমরাও নতুন করে বিপুল বিনিয়োগ করি। কারখানায় অত্যাধুনিক ভিআরএম প্রযুক্তি স্থাপন করি। মান যাচাইয়ে নতুন পরীক্ষাগার বা ল্যাব স্থাপন করি। এই ল্যাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সিমেন্টের মান যাচাই করেছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিদেশি পরামর্শকেরা। আমরা মানের সঙ্গে কোনো আপস করিনি। পদ্মা সেতু ছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ সরকারের বড় বড় সব অবকাঠামো প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহ করেছি ও এখনো করছি। এর ফলে পণ্যের মান ও উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে যখন আমাদের পণ্য বা সিমেন্ট ব্যবহারের অনুমোদন পেল, তখন মনে হয়েছে, দেশের পতাকাটাকে নিজ হাতে বহনের সুযোগ পেয়েছি। তাই দেশের তথা পতাকার মান সবকিছুর ঊর্ধ্বে ধরে রাখতে উৎপাদনের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করিনি। লাভ-লোকসানের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছি। এ কারণে গ্যাস-বিদ্যুতের নানা সংকটের মধ্যেও এক দিনের জন্যও এ প্রকল্পে পণ্য সরবরাহে বিলম্ব ঘটেনি। পদ্মা সেতু দেশের আপামর মানুষের মতো আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্যও একটি গর্বের ও গৌরবের প্রকল্প। আমরা এখন নিজেদের অনায়াসে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করতে পারি। সেই ভিত্তিকে আরও মজবুত করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। প্রথম দিন আমাদের প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৫০০ টন সিমেন্ট সরবরাহ করেছিল। শুধু সিমেন্ট সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলাম না, এ সেতু নির্মাণের প্রতিটি স্তরে নিজে উপস্থিত থেকে বিশাল এ কর্মযজ্ঞকে উপভোগ করেছি। তাই পদ্মা সেতু আমাদের জন্যও এক অসম্ভব ভালো লাগার অনুভূতির নাম।
আমিরুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রিমিয়ার সিমেন্ট