>
- দেশে প্রায় ৩৭ লাখ টিআইএনধারী আছেন।
- এ বছর ১৫ লাখ ৯১ হাজার টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়েছেন
- এটি মোট টিআইএনধারীর ৪৫ শতাংশ।
দেশে যত কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন, তাঁদের অর্ধেক এবার বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেননি। চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত সময় (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৬১০ জন টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়েছেন। আর বর্তমানে প্রায় ৩৭ লাখ টিআইএনধারী আছেন। সে হিসেবে এবার এখন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশের মতো রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য ২ ডিসেম্বরের পরও রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সময় আবেদন করে টিআইএনধারীরা নিজেদের রিটার্ন দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে নিতে পারেন। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এবার মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১০৫ জন টিআইএনধারী আবেদন করে দুই মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছেন। এনবিআর ধরে নিয়েছে, তাঁরা রিটার্ন জমা দেবেন। সে হিসেবে এবার মোট রিটার্ন জমা পড়বে মোট ২০ লাখ ৬ হাজার ৭১৫টি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নানা কারণে টিআইএনধারীরা রিটার্ন জমা দেন না। ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইসেন্স, ভবন নির্মাণ, গাড়ি কেনাসহ বিশেষ কিছু কাজে টিআইএন থাকতেই হয়। এসব কাজ শেষে অনেকের ব্যবসা লোকসান হয়; ভবন তৈরির পর করযোগ্য আয় থাকে না—এসব কারণে টিআইএন নিয়েও অনেকে পরে আর রিটার্ন জমা দেন না। আবার পরপর তিন বছর করযোগ্য আয় না থাকলেও রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের দারিদ্র্যের হার, সঞ্চয় প্রবণতা, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বিবেচনা করলে দেশে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ লোকের কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন খাতে নানা ধরনের কর মওকুফ, কর রেয়াত দেওয়া আছে। এতেও অনেকে করের আওতার বাইরে চলে যান। তাঁর মতে, এনবিআরের জনবল বাড়ানো হলে আরও বেশি লোককে করের আওতায় আনা যাবে। রিটার্ন জমার পরিমাণও বাড়বে।
সার্বিকভাবে এবার রিটার্ন জমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কর আদায়ও বেড়েছে। এবার নির্ধারিত সময়ে ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৬১০ জন টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়ে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা কর দিয়েছেন। গত অর্থবছরে নির্ধারিত সময়ে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৪ জন রিটার্ন দিয়ে ৪ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা কর দিয়েছিলেন। এবার সোয়া দুই লাখের মতো বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে। এবার ২৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
প্রতিবছর নভেম্বর মাসে সারা দেশে কর মেলার আয়োজন করে এনবিআর। কর মেলায় সবচেয়ে বেশি রিটার্ন জমা পড়ে। এবার সারা দেশের কর মেলায় ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩ জন টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়েছেন। মেলা থেকে প্রায় ২ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে, যা গত আটটি কর মেলার মধ্যে সর্বোচ্চ আদায়। এবারের মেলায় এসে নতুন ইটিআইএন নিয়েছেন ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন।
এবার রিটার্ন জমার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো বেসরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা রিটার্ন জমা না দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের ওই কর্মীর বেতনভাতা খরচ হিসেবে দেখানো যাবে না। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দেওয়ার নির্ধারিত সময়।
১০ ধরনের পেশাজীবীর ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। এই তালিকায় আছেন চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, ব্যয় ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষ হিসাববিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, জরিপকারী, আয়কর পেশাজীবী এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীয় সরকারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার।
অন্যদিকে কিছু কিছু ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। যেমন বণিক বা শিল্পবিষয়ক বা ব্যবসায়ী সংঘের সদস্য, এমন ব্যবসায়ীদের অবশ্যই বছর শেষে আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। আবার অনেকেই সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁরাও বাধ্যতামূলক রিটার্ন দেওয়ার তালিকায় আছেন। এ ছাড়া কোম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক বা কর্মী, ফার্মের অংশীদার হলেও রিটার্ন দিতেই হবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। আর সরকারি চাকরিজীবীর বেতনভাতা যদি ১৬ হাজারের বেশি হয়, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই; তাঁদেরও বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা দিতে হবে।
সম্পদ ও জীবনযাত্রার বিবেচনায় বেশ কিছু টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। গাড়ির মালিক হলে রিটার্ন দিতে হবে। আবার ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের মতো অভিজাত ক্লাবের সদস্য হলেও রিটার্ন দিতে হবে। পৌরসভা, সিটি করপোরেশন বা সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে হলে রিটার্ন জমা দিতে হবে।