বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষণা করা হয়েছে।
জুনের ৮ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষণা করেছে।
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে চীন ছাড়া সব বড় অর্থনীতিই সংকুচিত হয়েছে, পাশের দেশ ভারতে যে হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পৃথিবীজুড়ে লকডাউন পর্ব শেষ হয়েছে। সংক্রমণ এখনো থামেনি। তবে কোনো দেশেই এখন আর লকডাউন নেই। বরং কীভাবে লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় বা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কীভাবে হবে, তা নিয়েই চলছে এখন তুমুল আলোচনা।
বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষণা করা হয়েছে। জুনের ৮ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকোচন হচ্ছে। যুক্তরাজ্যেও আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষণা করা হয়েছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে চীন ছাড়া সব বড় অর্থনীতিই সংকুচিত হয়েছে, পাশের দেশ ভারতে যে হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
ফলে মন্দা এখন আর আশঙ্কার ব্যাপার নয়, একদম বাস্তব। তাই এখন কথা হচ্ছে মন্দার গতি-প্রকৃতি কী এবং তা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়। অর্থনীতিবিদেরা ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা ব্যবহার করে এই মন্দা ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন: ভি, ইউ, ডব্লিউ, এল ইত্যাদি। ব্যাপারটা হলো, পতনের ধারা রেখাচিত্রে অঙ্কন করা হলে এই অক্ষরগুলোর আকৃতি ধারণ করে। এগুলো জিডিপির গতিপ্রকৃতি, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকের প্রকাশক।
ভি আকৃতির মন্দা
দ্রুত পতন ও ত্বরিত পুনরুদ্ধার
কোভিড-১৯-এর প্রেক্ষাপটে ভি আকৃতির মন্দাই অর্থনীতির জন্য ভালো মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। এই ক্ষেত্রে পতন যেমন দ্রুত হয়, তেমনি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়। ক্ষতি খুব একটা হয় না। ১৯৯০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রকৃতির মন্দা দেখা গিয়েছিল। এর স্থায়িত্ব ছিল আট মাস, ১৯৯০ সালের জুলাই থেকে ১৯৯১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। অর্থনীতি দ্রুতই সেই ক্ষত সারিয়ে উঠতে সমর্থ হয়।
কোভিডজনিত এই মন্দা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হলে সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। মানুষের ক্ষতিপূরণ করতে হবে, চাকরি বাঁচানো থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষাসহ সব ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই।
ইউ আকৃতির মন্দা
পতন ও পুনরুদ্ধারের মধ্যে দীর্ঘ সময়
এ ধরনের মন্দার কালপর্ব ভি আকৃতির মন্দার তুলনায় কিছুটা দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পতনের পর নতুন করে উত্থানের আগে অর্থনীতি বেশ কিছুদিন তলানিতে অবস্থান করে। রেখাচিত্রে উপস্থাপন করা হলে তা ‘ইউ’ অক্ষরের আকৃতি ধারণ করে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনরুদ্ধার ‘ইউ’ আকৃতির হবে বলে ডাচ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএনজির এক গবেষণা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের পর ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতি এখন গতি ফিরে পেতে শুরু করেছে। তবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটন খাত সচল হতে সময় নেবে। রেস্তোরাঁ ও সিনেমা হলের মতো জায়গাগুলোতে মানুষ এখনো স্বচ্ছন্দ নয়। তাতে এটি ইউ আকৃতির মন্দা ও পুনরুদ্ধার হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
ডব্লিউ আকৃতির মন্দা
দ্রুত পুনরুদ্ধার, দ্বিতীয়বার পতন
এ ধরনের মন্দায় দেখা যায়, অর্থনীতি দ্রুতই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে, কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আবার পতন শুরু হয়। সে জন্য ইংরেজিতে একে ডাবল-ডিপ রিসেশন বা দ্বিমুখী পতন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০-এর দশকে এই ধাঁচের মন্দা দেখা গিয়েছিল। তখন দেশটি কেবল দ্বিতীয় তেলসংকট এবং ১৯৭৯ সালের মূল্যস্ফীতির সংকট কাটিয়ে উঠেছে স্বল্প মেয়াদে মন্দার কবলে পড়ে, তবে দ্রুতই সূচক বাড়তে শুরু করে।
ফেডারেল রিজার্ভ মনে করল, মূল্যস্ফীতির হার বেশি এবং সে জন্য তারা সুদহার বাড়াল। এতে দেশটি ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে আবার মন্দার কবলে পড়ে। ১৯৮২ সালের শেষ নাগাদ তারা দ্রুতই এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে।
এল আকৃতির মন্দা
দীর্ঘ মন্দা
অনেক সময় দেখা যায়, অর্থনীতি গভীর মন্দায় পতিত হওয়ার পর প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। অর্থনীতির ধারাবাহিক সংকোচনের পর তা কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে—এটাই এল আকৃতির মন্দা। এ কারণে এই ধাঁচের মন্দার আশঙ্কা দেখা দিলে বরাবরই অর্থনীতিবিদেরা অস্বস্তিতে পড়ে যান।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি এল আকৃতি ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সময় বেশি লাগলে পুনরুদ্ধার দীর্ঘায়িত হতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে জাপানে এই ধাঁচের মন্দা দেখা গিয়েছিল।
ফোর্বস অবলম্বনে