অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে কাজ করবে

দেশীয় অর্থায়নে, দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি পদ্মা সেতু এ দেশের বিভিন্ন খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সেতু প্রকল্পে দেশীয় পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে রড, সিমেন্টসহ আরও অনেক খাতের। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত সিমেন্ট, রড, নির্মাণ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা তাঁদের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রথম আলোকে। কথা বলেছেন সুজয় মহাজন।

মো. আলমগীর কবির
মো. আলমগীর কবির

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যবহৃত পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে হয়েছে। এতে নিশ্চিত হয়েছে সম্পূর্ণ রি-বারের ইউনিফর্ম, ইউনিফর্ম ডায়ামিটার, সর্বোচ্চ শক্তির টেম্পারড মার্টেনসাইট রিং ইত্যাদি সুবিধা। পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প হয়তো দেশে সচরাচর খুব বেশি হবে না। কারণ, এ জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থের।

পদ্মা সেতু তৈরির এ সাহসী পদক্ষেপ বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। এতে এ দেশের মানুষ ও পণ্যের ভালো ভাবমূর্তি তৈরি হবে বহির্বিশ্বে। এ সেতু প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারা আমাদের জন্য বিশাল এক অভিজ্ঞতা। এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমরা যেমন গর্বিত, তেমনি সরকারের প্রতিও কৃতজ্ঞ। এই প্রকল্পের কারণে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা কিছুটা হলেও বেড়েছে।

পদ্মা সেতুকে আমরা শুধু নদীর দুই পারের সংযোগ হিসেবেই দেখতে চাই না। এ সেতু যান চলাচল সহজ করার পাশাপাশি নতুন অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করছে। আমরা শিল্পোদ্যোক্তারা এটিকে অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে দেখছি। উদাহরণ হিসেবে এখানে বলা যায়, বাংলাদেশে যদি ১০০ বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে তার ৯৫ শতাংশই বৃহত্তর ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

এর ফলে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের নতুন জমির সংকুলান কমে গিয়েছিল। এমনকি বৈদেশিক বিনিয়োগও কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ ছাড়া জমির স্বল্পতার কারণে জমির দামও আকাশচুম্বী হয়েছে। তাই যেকোনো নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও টেকসই করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেকোনো ভারী শিল্পকারখানার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গভীর পানিপথের প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে উপযুক্ত জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেলপথ এবং সমুদ্রবন্দর সুবিধা থাকলে তা বৃহৎ শিল্পকারখানা স্থাপনের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য নীতিনির্ধারণী সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি পরিবেশ একটি বড় ইস্যু। যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না থাকে তাহলে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে শিল্পের বিকাশে খুব বেশি দেরি হবে না বলে বিশ্বাস করি। পদ্মা সেতুর বদৌলতে এই পর্যটনকেন্দ্রগুলো দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে। তাতে এ খাতের বিনিয়োগ অনেক বাড়বে।

মো. আলমগীর কবির চেয়ারম্যান, জিপিএইচ ইস্পাত