অমিক্রনের কারণে নতুন ক্রয়াদেশ বন্ধ হয়ে গেছে

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা–বাণিজ্য। চলতি বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি কাঁচমালের মূল্যবৃদ্ধি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। আবার নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অমিক্রন। বছরটি কেমন গেল, তা নিয়ে শিল্প ও ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছয়জনের অভিমত ছাপা হলো আজ। কথা বলেছেন তাসলিমা মিজি

তাসলিমা মিজি
তাসলিমা মিজি

করোনার আগে বছরে আমাদের অন্তত ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হতো, যার ৭০ শতাংশই ছিল রপ্তানি। কিন্তু করোনার প্রভাবে ফ্যাশন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যাগ রপ্তানিতে ধস নামে। পরিস্থিতির যখন উন্নতি ঘটতে শুরু করে, তখন ব্যবসায়ে ধীরে ধীরে আবার গতি আসে। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের শুরুর দিকে ক্রয়াদেশ ভালোই আসছিল। এরই মধ্যে মহামারির নতুন ধরন অমিক্রনের কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে আবার লকডাউন তথা বিধিনিষেধ দেওয়া শুরু হয়েছে। সে কারণে আবারও নতুন ক্রয়াদেশ আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রথমবার করোনার প্রকোপে যখন পণ্য বিক্রি তলানিতে গিয়ে ঠেকে, তখন আমি ব্যাগ তৈরির পুরো শ্রমশক্তিকে মাস্ক তৈরির কাজে নিয়োজিত করি। সেই মাস্ক অনলাইনে দেশের বাজারে বিক্রি হয়। এভাবে সাধারণ সময়ের আয়ের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে। সেই আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী খরচগুলো মিটিয়েছি।

করোনার ধাক্কা সামলাতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তখন আমার কোনো চলতি মূলধনের বিপরীতে ঋণ ছিল না (সিসি লোন)। ফলে ব্যাংক ঋণ পেতে ব্যর্থ হই। এতে যে অসুবিধা হয়, তা হচ্ছে, মাঝের সময়টাতে যখন ইউরোপের বাজার থেকে কাজের ফরমাশ পাচ্ছিলাম, তার সবটুকু নিয়ে কাজ করার মতো মূলধন আমার কাছে ছিল না। এতে আমার আর্থিক ক্ষতি হয়। সরকারি প্রণোদনা ঋণ আকারে না দিয়ে অন্য কোনো আকারে দেওয়া হলে কিছুটা সুবিধা হতো।

করোনায় একমাত্র ভালো দিক ছিল দেশীয় বাজারে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হওয়া। যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিদেশি পণ্য আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। এর ফলে অনেক দিন পর্যন্ত দেশীয় পণ্যের বাজার চাঙা ছিল। এই সময়টুকুর মধ্যে আমরা নতুন ক্রেতাশ্রেণি তৈরির সুযোগ পেয়েছি। এভাবে ব্যবসা কিছুটা এগিয়েছেও।

আমরা যারা মূলত রপ্তানিনির্ভর কাজ করি, তাদের বেশির ভাগেরই দেশে কোনো বিক্রয়কেন্দ্র নেই। এ ছাড়া ক্রেতাদের সঙ্গে আমরা নিজেরাই যোগাযোগ করি। এই বিষয়টির ব্যবস্থাপনা সরকারের তরফ থেকে করা গেলে আমাদের জন্য ভালো হয়। এ বছর ডিসেম্বরে জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) মেলায় অন্য বছরগুলোর তুলনায় ৩০০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পণ্য রপ্তানির নতুন ক্রেতাও মিলেছে। সরকারের এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে আশা করি, সামনের বছরে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে সামনের দিকে এগোতে পারব।