অনিয়মে বাদ ১৪ লাখ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দিতে ৫০ লাখ পরিবারের যে তালিকা করা হয়, তা থেকে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৮০১ জনকে বাদ দিয়েছে সরকার। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তাঁদের টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

 অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৬ আগস্ট এ তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে এনআইডির বিপরীতে মোবাইল সিম নিবন্ধিত না থাকা ব্যক্তিই রয়েছেন ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৪ জন। এ ছাড়া একই ব্যক্তির তথ্য একাধিকবার থাকাসহ সরকারের পেনশনভোগী, সরকারি কর্মচারী, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের মালিকেরাও রয়েছেন।

তবে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৩ জন আড়াই হাজার করে টাকা পেয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ৮৭৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ২২ হাজার জন বা ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ পেয়েছেন ঢাকা বিভাগ থেকে। আর সবচেয়ে কম ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৩২ জন বা ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ পেয়েছেন বরিশাল বিভাগ থেকে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ লাখ লোকই টাকা পাবেন। তবে যোগ্য লোকেরাই
যাতে টাকা পান, সে জন্য তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে।

৫০ লাখ পরিবারকে দেওয়ার জন্য খরচসহ অর্থ বিভাগ বরাদ্দ রেখেছিল ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। শুরুর দিকে যাঁদের টাকা দেওয়া হয়েছিল, মোবাইল ফোন সচল না থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে থেকে ২ হাজার ৩৩১ জনের ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ টাকা ফেরত আসে। অর্থ বিভাগ এখন তাঁদের বাদ দিয়ে মোট তালিকা করেছে ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ১৫৪ জনের।

>

৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দিতে সরকার যে তালিকা করেছিল, তা থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ ব্যক্তিকে

অর্থ বিভাগ বলেছে, টাকা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ লাখ ৫৩ হাজার জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর। আর ২৪ হাজার জনের বয়স ৮০ বছরের বেশি। এ ছাড়া টাকা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ লাখ দিনমজুর, সাড়ে ৪ লাখ কৃষক, সাড়ে ৩ লাখ শ্রমিক, সোয়া ২ লাখ গৃহকর্মী, পৌনে ২ লাখ মোটরশ্রমিক এবং সোয়া ৫ লাখ অন্যান্য পেশার মানুষ।

নগদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগদ ১৭ লাখ, বিকাশ ১৫ লাখ, রকেট ১০ লাখ এবং শিওর ক্যাশের মাধ্যমে ৮ লাখ মানুষের কাছে টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এনআইডির বিপরীতে মোবাইল ফোন নম্বর না থাকায় অনেকের টাকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। সরকার পরে এ জন্য গত জুনে ১০ টাকার আমানত-সংবলিত ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১২ লাখ ৯০ হাজার ১৬৪ জনকে প্রায় ৩২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে নগদ। আর সবচেয়ে কম ৯০ হাজার ৯৮০ জনকে ২২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পৌঁছানো হয়েছে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। এ ছাড়া বিকাশ
৯ লাখ ৩০ হাজার, রকেট ৭ লাখ ৫ হাজার এবং শিউরক্যাশ ৪ লাখ ৮০ হাজার জনকে টাকা বিতরণ করেছে।

জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তালিকা নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা আমরা দেখলাম, অন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা থাকা স্বাভাবিক। সেগুলো সংশোধনেও সরকারকে হাত দিতে হবে।’