যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্রবিক্ষোভে পুলিশের মারমুখী আচরণ নিয়ে দেশটির সরকারের বক্তব্য জানতে প্রবলভাবে আগ্রহী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার পাঁচ দেশে সফর শেষে বুধবার হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো একজন মেয়র প্রার্থীকে ঘুষি মারলে সেটার জন্য বিবৃতি দেওয়া হয়। হিরো আলমকে ঘুষি মারলে বিবৃতি দেয়। চরমোনাইয়ের ভাইকে ঘুষি মারলেও বিবৃতি দেয়। এখন যে ২ হাজার ৪০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো, শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হলো, এ নিয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) বক্তব্য কী, সেটা জানার জন্য প্রবল আগ্রহ আমার।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রে যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের কী বর্বরভাবে দমন করা হচ্ছে। এমনকি শিক্ষকেরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এক শিক্ষকের বুকের পাঁজর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা আমাদের দেশে বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে যদি পুলিশ করত, আমার প্রশ্ন এখন তাদের কাছে, তখন তারা কী করত?’
মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর নিয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করার জন্য। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করছেন, সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে। অন্য বিষয়গুলো নিশ্চয়ই আলোচনায় আসবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বরাবরই চমৎকার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির মাধ্যমে সম্পর্ক আরও উন্নত করার ব্যাপারে একযোগে কাজ করছি। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতের দিনগুলোয় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের যে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক আছে, সেটি আরও গভীর করতে চাই।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে হাছান মাহমুদ জানান, অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মেট্রোরেলে ভ্রমণের আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি।
হাছান মাহমুদ জানান, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে তা সম্প্রসারণে জোর দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে পূর্বসম্মতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য থেকে এয়ারবাস কেনা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের রাজনীতি আত্মহননমূলক। তিনি আরও বলেন, ‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে যাঁরা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত, তাঁরা দেশের সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে আমার প্রশ্ন, কোনো নির্বাচনেই যদি অংশ নিতে না পারেন, তবে আর কেন বিএনপির রাজনীতি করবেন।’
উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হলেও বিএনপি কেন ঢাকা শহরে লিফলেট বিতরণ করছে? এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, এগুলো তাদের (বিএনপি) লোকদেখানো কর্মসূচি। কখন যে তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জনের লিফলেট বিতরণ করতে দূতাবাসগুলোয় চলে যায়, সেটিই দেখার বিষয়। কারণ, তারা তো কথায় কথায় বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দেয়।