ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংস্কার ভাবনা থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন, ঢাকা
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংস্কার ভাবনা থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন, ঢাকা

গণমাধ্যমের জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত তদারকি দরকার

‘ভরসা ফিরুক গণমাধ্যমে। কোন সংস্কারে স্বাধীন হবে মিডিয়া’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম

সব সরকারই মনে করে, তার কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যম যত কম সোচ্চার হবে, তার জন্য তত সুবিধা। তাই বিগত সময়ে সরকার নানাভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। বিদ্যমান তদারকি বা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাই এমন যে সরকার সহজেই গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই গণমাধ্যমকে পাঠক-শ্রোতা-দর্শকদের কাছে জবাবদিহির বিষয়টি কার্যকর করতে তদারকি দরকার, যা হবে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘ভরসা ফিরুক গণমাধ্যমে। কোন সংস্কারে স্বাধীন হবে মিডিয়া’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন সাংবাদিকতার শিক্ষক, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংস্কার ভাবনা থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক কামাল আহমেদ। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের গঠনপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান আইনে প্রেস কাউন্সিল বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে না। প্রেস কাউন্সিল সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া দরকার। সেটি হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আবার সাংবাদিকদেরও জবাবদিহি থাকতে হবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমের মালিক কারা হবেন, সেই প্রশ্নেরও নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

কামাল আহমেদ বলেন, টেলিভিশনগুলোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ মূলত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হাতে। সেটির পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকার যেভাবে চায়, সেভাবেই বিটিআরসি কাজ করে এবং টেলিভিশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে গণমাধ্যম চললে সেই গণমাধ্যম কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না। তাই এটির পরিবর্তন দরকার। তাঁর মতে, দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহি মূলত পাঠকদের কাছে, দর্শকদের কাছে, শ্রোতাদের কাছে। কিন্তু সেটি কার্যকর করার জন্য তদারকি দরকার। এটা সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, মানুষের মাধ্যম হিসেবে কাজ করার জন্যই গণমাধ্যম; কিন্তু গণমাধ্যম মানুষের কথা বলে না। এখানেই সংস্কারটি দরকার। এ বিষয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে হবে। গণমাধ্যমের লিখিত নীতি থাকা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের নানা বাধা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের কথা তুলে ধরে সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, গণমাধ্যম প্রশ্ন নয়, প্রশংসার মাধ্যমে পরিণত হয়েছিল। এটি এক দিনে ঘটেনি। কোনো কোনো গণমাধ্যমে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ঠেকানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহৃত হতো। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, গণমাধ্যম অতিরিক্ত মাত্রায় পরিবর্তনকে উদ্‌যাপন করছে। কখনো যুক্তিহীনভাবে, কখনো ব্যক্তির উদ্দেশে।

আলোচনা সভায় সঞ্চালক ছিলেন সাঈদ কবীর। তিনি বলেন, ‘হাজারো সমস্যার মধ্যে আমরা চাই, গণমাধ্যমে কিছু সংস্কার হোক। গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ করতে না পারলেও অন্তত যদি গণমুখী, নির্দলীয়, বস্তুনিষ্ঠ ও ভিন্নমতের সংবাদ পরিবেশন করতে পারি; তাহলেও হয়তো একটি ভালো ভূমিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য পাব। সংস্কারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীন মতপ্রকাশের যেসব আইনি বাধা আছে, সেগুলো বন্ধ করতে চাই।’