শ্রমিকদের জন্য রেশন চালু করা উচিত

সেলিম রায়হান
সেলিম রায়হান

জ্বালানি তেলের দাম এমন সময়ে বাড়ল, যখন মূল্যস্ফীতি ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। তেলের মূল্যবৃদ্ধি এখন মূল্যস্ফীতিকে আরেক দফা উসকে দেবে। এটি অবশ্য নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করছেন। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এই সময়টা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া কর ছাড় দিলে জ্বালানি তেলের দাম এতটা বাড়াতে হতো না।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কোন শ্রেণির মানুষের ওপর বেশি চাপ পড়বে, তা নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা কোনো অনুশীলন (হোমওয়ার্ক) করেছেন বলে মনে হয় না। মূল্যবৃদ্ধির আঘাত যাদের ওপর পড়বে, তাদের জন্য কোনো সহায়তা কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। গরিব মানুষ আগে থেকেই বিপদে আছেন।

এখন বিশাল জনগোষ্ঠী গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সীমিত আয় ও নিম্নমধ্যবিত্তেরা বেশি কষ্টে আছেন। এই শ্রেণির সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্র খুবই সীমিত। সরকারি কোনো কর্মসূচি নেই। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী ভাব তাদের কঠিন সময়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য দিতে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু এই সুবিধা কত দিন পরপর পাওয়া যাবে, কত দিন ধরে দেওয়া হবে, তা বলা হচ্ছে না। আবার এখন কষ্টের মধ্যে পড়েছেন নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। তাঁরা কোথায় যাবেন?

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, কোভিডের সময়ে অনেকেই বেকার হন। তাঁদের অনেকে রাইড শেয়ারিংয়ের মতো পেশায় এসেছেন। তাঁরা দারিদ্র্যসীমার একটু ওপরে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রাইড শেয়ারিং ব্যবসা কমবে। এই শ্রেণির আয় কমবে।

মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। সীমিত আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির খরচের ধরনও এখন পাল্টে যাবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে তাঁরা খরচ কাটছাঁট করবেন।

শ্রমিক শ্রেণির মানুষের জীবনধারণও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর মজুরি বাড়ানো হলেও আসলে তাদের প্রকৃত মজুরি কমছে। যেকোনো সংকটে মালিকপক্ষ এগিয়ে আসে না, তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ করে পোশাকশ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা উচিত। প্রতিটি কারখানায় নিত্যপণ্যের একটি দোকান থাকবে, যেখান থেকে তাদের শ্রমিকেরা রেয়াতি মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারবেন। এ ছাড়া সরকারও মালিকদের সঙ্গে এই ধরনের উদ্যোগে অংশ নিতে পারে।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, সানেম