৪৫ বছর পর আবার ঢাকায় চালু আর্জেন্টিনার দূতাবাস

দুই দেশের জাতীয় সংগীতের পর ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় দূতাবাস
ছবি: সংগৃহীত

৪৫ বছরের বিরতি শেষে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে পুনরায় চালু হয়েছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস। দূতাবাসের উদ্বোধনের সময় লাতিন আমেরিকার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়ারো বলেছেন, পুনরায় দূতাবাসের উদ্বোধন শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, দুই দেশের জনগণের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপর্ণ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। এ সময় সান্তিয়াগোর পাশে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

সান্তিয়াগো ক্যাফিয়ারো দূতাবাস উদ্বোধনের পর আর্জেন্টিনা এবং তাঁর দেশের ফুটবলারদের প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।

আর্জেন্টিনার পতাকা উত্তোলনের পর ইনস্টার লিমিটেড নামের ওই ভবনের দোতলায় আর্জেন্টিনা দূতাবাসের নামফলক উন্মোচন করেন সান্তিয়াগো ক্যাফিয়ারো ও শাহরিয়ার আলম। তখন রাস্তার পাশের ফুটপাতে বড় স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিদের নৈপুণ্য আর বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের বাঁধভাঙা উদ্‌যাপন।

দুই দেশের জাতীয় সংগীতের পর ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় দূতাবাস। স্মারক হিসেবে সেই ফিতার অংশ বিশেষ উপস্থিত কয়েকজনের হাতে তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাফিরো।

১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার তখনকার সামরিক সরকার বাংলাদেশে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই থেকে আর্জেন্টিনার ভিসাসহ বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সব ধরনের কর্মকাণ্ড দিল্লিতে থাকা দেশটির সমদূরবর্তী মিশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।

আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়ারো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভোলেনি। পৃথিবীকে তারা দেখিয়েছে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা। আর সেই কারণে আমরা এখানে এসেছি, সেই ভালোবাসার প্রতি সুবিচার করতে এবং আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার মাধ্যম হিসেবে পুনরায় দূতাবাস চালু করছি।’ তিনি বলেন, সংস্কৃতি, ফুটবল, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক এবং একাত্তরে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি বাংলাদেশের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সম্পর্ককে জীবন্ত রেখেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি এক আনন্দের ক্ষণ। বাংলাদেশে পুনরায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু শুধু কূটনীতি নয়, আবেগরও বহিঃপ্রকাশ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশ এবং জনগণের গভীর বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশটির কাছে বাংলাদেশের  গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। লাতিন আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণের বিষয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট আগ্রহী।

ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা যে হাজার হাজার মাইলের দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই দেশকে অনেক কাছে নিয়ে এসেছে, সে কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগলিক দূরত্বের বাধা পেরিয়ে দুই দেশের জনগণ হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার মিশন পুনরায় চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ সফরে আপনি আমাদের হৃদয়ে আর্জেন্টিনার বিশেষ অবস্থানের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন। যেভাবে আমরা সর্বকালের সেরা ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ভক্তি করেছি, সেভাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম পেয়েছে আরেক নায়ক লিওনেল মেসিকে। একটা বিষয়, যেটার কখনো পরিবর্তন হয়নি, তা হলো আর্জেন্টিনার ফুটবলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা।’