জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ সইয়ের দুই দশক পূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে নিয়ে পাঁচ দিনের সম্মেলন সোমবার শুরু হচ্ছে।
জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এতে অংশ নিচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার আসিয়া খাতুনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনের এবারের আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ এতে অংশ নিচ্ছে। তাঁরা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক দপ্তরের (ইউএনওডিসি) তত্ত্বাবধানে দুই বছর পর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ২০০৩ সালে সনদ সইয়ের পর থেকে এতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো কীভাবে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, সেটা মূল্যায়নের জন্য এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
জানা গেছে, সাধারণত সম্মেলনের আগে প্রতিটি দেশের দুর্নীতি দমন পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন অন্য দুটি দেশ চূড়ান্ত করে, তা সম্মেলনের জন্য উপস্থাপন করে। যেমন এবার সুইজারল্যান্ডের প্রতিবেদনের প্রস্তাবিত খসড়াটি মূল্যায়ন করে তা চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ ও সুইডেন। তেমনি বাংলাদেশের দুর্নীতিসংক্রান্ত প্রতিবেদনটি তাজিকিস্তান ও কমোরোসের চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু সমন্বয়গত জটিলতায় সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী দশম সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত অংশগ্রহণকারী দেশগুলো যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যূনতম ছাড় দেয় না, সেটা তুলে ধরার একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে এই সম্মেলন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে যেসব প্রচার নানা মহলে রয়েছে, তা নিয়ে সরকারের অবস্থান উপস্থাপনের কার্যকর একটি ফোরাম এই সম্মেলন।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ গত আগস্টে ঢাকা সফরের সময় আটলান্টায় জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশ সফরে তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে কীভাবে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) হয়, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি দুর্নীতি দমনের বিদ্যমান কৌশলের পাশাপাশি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কী কী নতুন কৌশল নেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেন।
এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে রিচার্ড নেফিউ বুঝতে চেয়েছেন, কীভাবে এখানে দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচার রোধ কার্যক্রম জোরদার করা যায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে ও অর্থ পাচার রোধে কী ধরনের আইন রয়েছে। এতে রাষ্ট্র ও সরকার জনগণের কাছে কতটুকু জবাবদিহি করে। নাগরিক সমাজ দুর্নীতি দমনে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামগ্রিক জবাবদিহি কতটুকু কার্যকর।