রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের জন্য জবাবদিহির বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সেই জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের সেমিনারকক্ষে গুণীজনদের সঙ্গে তরুণদের একান্ত বৈঠক ‘অন্তরঙ্গ আলাপে গুণীজন’-এর আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন আলোকচিত্রী ও দৃক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ষষ্ঠ এ বৈঠকে ‘আলোকচিত্র, প্রতিবাদ ও আমার জীবন’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন শহিদুল আলম। আলোচনার শুরুতে বিভিন্ন সময়ে নিজের তোলা গুরুত্বপূর্ণ সব ছবি বের করে দেখান তিনি। বর্ণনা করেন জীবনের বিচিত্র ও সংগ্রামী যাত্রা। গল্পে গল্পে যুক্ত করেন, আলোকচিত্র দিয়ে কীভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি পারিবারিক জীবনে পরিবর্তন আনা যায়।
শহিদুল আলম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল করতে আমি আলোকচিত্র ব্যবহার করেছি। দুর্ভিক্ষ ও বন্যার মতো বিপর্যয়ে যে আলোকচিত্র তুলেছি, সেখানে তুলে ধরেছি কৃষক, মাঝিদের পুনরুজ্জীবনের চিত্র।’
এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘আশির দশকে দেশে এত বড় একটা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হচ্ছিল, সেসব ছবি বিদেশে পাঠালাম। দেখলাম কারও মাথাব্যথা নেই। যখন সাইক্লোন হলো, আমরা দুর্দশার ছবি না পাঠিয়ে আশাবাদের ছবি পাঠালাম। সেগুলোই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মনোযোগ কাড়ল।’
শ্রোতাদের মধ্য থেকে জেলজীবনের স্মৃতি জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, ‘জেল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। কেরানীগঞ্জে আমি অনেক রকমের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে আমরা অনেক মানুষ মিলে সবজি চাষ করেছি, ছবি এঁকেছি, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছি। সেখানে একটি ব্যান্ড দলও আছে, যাদের নিজেদের অনেকগুলো গান আছে। আমরা এত কিছু করেছি, সেগুলো এখন ভিডিও করে প্রচার করা হয়। বলা হয়, কেরানীগঞ্জ এখন মডেল জেলখানা।’
মূল্যবোধের সার্বিক অবক্ষয় নিয়ে আরেক শ্রোতার করা প্রশ্নের জবাবে শহিদুল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার সংজ্ঞা বদলাতে হবে। প্রকৃত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার পরিমার্জন দরকার।’
সব সরকারের আমলে নিপীড়নের শিকার হওয়া প্রসঙ্গে শহিদুল বলেন, ‘সব আমলে সরকার আমাকে শত্রু মনে করে। বিরোধী দল মনে করে বন্ধু।’ আবার অনেকেই তাঁকে অসমসাহসী মনে করেন উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি সাহসী নই, আমি কেবল নীরব থাকিনি। অনেকেই নীরব থাকে। বড় বড় শিল্পী, স্থপতিরা চুপ থাকে নানা রকম স্বার্থের কারণে।’
বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ইমেরিটাস অধ্যাপক আহরার আহমদ। শহিদুল আলমের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও কীর্তিগুলো শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।
আহরার আহমদ বলেন, শহিদুল আলমের প্রতিভার ব্যাপ্তি স্পষ্ট, উজ্জ্বল ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। একদিকে যেমন লেখক, গবেষক, শিক্ষক ও সংগঠক হিসেবে তিনি সম্মান, স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করেছেন, তেমনি বাংলাদেশের আলোকচিত্রশিল্পকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে আলোকচিত্রশিল্পের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে ১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক ছবি মেলার আয়োজন করেন শহিদুল আলম। শ্রমজীবী মানুষকে গ্যালারির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে তিনি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর সূচনা করেন।
আগামী মাস থেকে দূষণে মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করবেন শহিদুল আলম।