কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)

‘মুগ্ধদের আন্দোলন তো এখনো শেষ হয়নি’

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এমবিএর শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের পানি আর বিস্কুট খাওয়াচ্ছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের কষ্ট সহ্য করতে পারছিলেন না।

পারিবারিক আলোচনায় বাবা ও মায়ের সঙ্গে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলে মানুষের কষ্টে পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন।

সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হয় মুগ্ধর বড় ভাই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মীর মাহমুদুর রহমানের (দীপ্ত) সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুগ্ধদের মতো যাঁরা আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করেছিলেন, প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের আন্দোলন একটা পর্যায়ে এসেছে। তবে মুগ্ধদের আন্দোলন তো এখনো শেষ হয়নি। তবে এত মানুষের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে আন্দোলন এ পর্যায়ে আসুক, তা কেউ চায়নি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের সবার পরিবার আছে।

মীর মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। তারপরও এখন যেন দেশটা ভালোভাবে চলে, সেটাই একমাত্র চাওয়া। মুগ্ধ সব সময় বলত, আমরা জঙ্গলে না থেকে সমাজে বাস করি। আর সমাজে একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে। দুর্নীতি হলে প্রতিবাদ করতে হবে। জাতিগতভাবে ভদ্র হতে হবে।’

বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে এখন অনেক কিছু করতে হবে বা অনেক কিছু করার বাকি আছে বলে মনে করেন মীর মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, নিজেরা নিজেদের নীতিগত জায়গায় ঠিক থাকলে দেশ আবার সামনের দিয়ে এগিয়ে যাবে।

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ২০২৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে স্নাতক শেষ করেন। ঢাকায় ফিরে মার্চে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি)। প্রফেশনাল এমবিএ করছিলেন। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতেন তিনি।
মাহমুদুর রহমান জানান, মুগ্ধর সঙ্গে থাকা বন্ধুদের বর্ণনা অনুযায়ী, মুগ্ধর কপালের মাঝখানে গুলি লেগে ডান কানের নিচ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)। তিনি জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলোয়াড়, গায়ক, গিটারিস্ট ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে বেশ সুনাম ছিল মুগ্ধর। ছিলেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার। শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে পেয়েছেন ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। মোটরসাইকেল নিয়ে ৩৪টি জেলার সার্কিট হাউসের সামনে ছবি তুলেছিলেন, চেয়েছিলেন সব জেলায় ঘুরবেন।

গুলিতে মারা যাওয়ার আগে মুগ্ধ ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছিলেন। একটি পোস্টে জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলের উদ্দেশে ছাত্র আন্দোলনটাকে রাজনৈতিক দলের আন্দোলন না বানানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। মুগ্ধর পরিবারের সদস্যরা বলেন, মুগ্ধ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর মৃত্যুর পর এ পোস্টকে কেন্দ্র করে অনেকে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। পরিবার চায় না মুগ্ধকে নিয়ে কোনো রাজনীতি হোক।