কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে শুক্রবার সকালে শুরু হয় মেরিন ড্রাইভ আলট্রা ম্যারাথন
কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে শুক্রবার সকালে শুরু হয় মেরিন ড্রাইভ আলট্রা ম্যারাথন

১০০ মাইল দৌড়ের আয়োজন

কক্সবাজার-মেরিন ড্রাইভ সড়কে দৌড় শুরু হয়েছিল শুক্রবার সকাল ৭টা ৩ মিনিটে। আয়োজন শেষ হতে হতে গতকাল শনিবার দুপুর পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ২৭ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মাইল (১৬১ কিলোমিটার) দৌড় সম্পন্ন করেছেন ৩১ বছর বয়সী মেহেদি হাসান। মুঠোফোনে গতকাল সন্ধ্যায় মেহেদি প্রথম আলোকে বললেন, ‘ম্যারাথন দৌড়ের চেয়ে বেশি দূরত্বের দৌড়ে আমার আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশে সুযোগ কম, তাই এ আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিলাম। আগেরবার ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব সম্পন্ন করেছিলাম।’ মেহেদি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

ম্যারাথন দৌড়ের দূরত্ব ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার বা ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ। দূরত্ব এর বেশি হলে সেটিকে আলট্রা ম্যারাথন বা আলট্রা রান বলা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার দৌড়বিদদের জন্য এমন আয়োজন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ ও এস্কেপেড এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এ আয়োজন করল। ৫০ ও ১০০ কিলোমিটার এবং ১০০ মাইল—এই তিন শ্রেণিতে ‘মেরিন ড্রাইভ আলট্রা’ নামের এ আয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত দূরত্ব দৌড়ে অতিক্রম করতে হয়।

মেরিন ড্রাইভ আলট্রা পর্ব-৩-এর রেস ডিরেক্টর মো. আবদুল্লাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এ আয়োজন। এবার স্লোগান ছিল “আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গৌরব”। এর আগে ২০২০ ও ২০২১ সালে আমরা মেরিন ড্রাইভ আলট্রার আয়োজন করেছিলাম। এ বছর প্রায় আড়াই হাজার দৌড়বিদ অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। বাছাইপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৮৭ জন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।’

মেরিন ড্রাইভ আলট্রায় সর্বোচ্চ দূরত্বের ১০০ মাইল অতিক্রম করতে পেরেছেন ৪ জন। মেহেদি হাসান ছাড়া বাকিরা হলেন এ বি এম সিদ্দিকুল আবেদিন (২৯ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড), মো. জাহেদুর রহমান (৩২ ঘণ্টা ১৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড) ও নাজিম আহমেদ (৩২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ৫ সেকেন্ড)। ১০০ মাইল দৌড় সম্পন্ন করার সময় ছিল ৩৩ ঘণ্টা। ৭ জন দৌড়বিদ এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছিলেন, ৪ জন সফল হয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের পর মো. সুলতান মাহমুদ খান পাঠান (৩৩ ঘণ্টা ৮ মিনিট ৪১ সেকেন্ড) ১০০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেন।

মো. আবদুল্লাহ জানান, মেরিন ড্রাইভ আলট্রায় ১০০ মাইল দূরত্ব ৩৩ ঘণ্টায়, ১০০ কিলোমিটার ১৯ ঘণ্টায়, ৫০ কিলোমিটার ৮ ঘণ্টায় সম্পন্ন করার নিয়ম ছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য। ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে ১৩৩ জনের মধ্যে ১০৩ জন, ১০০ কিলোমিটারে ৩৩ জনের মধ্যে ২৮ জন এবং ১০০ মাইলে ৭ জনের মধ্যে ৪ জন সফল হয়েছেন।

১৮৭ দৌড়বিদের মধ্যে পুরুষ ১৭৫ জন, নারী ৩ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ৯ জন অংশ নেন। ৪ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীও ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অংশ নেন। তাঁদের একজন নির্ধারিত সময়ের পর দৌড় শেষ করেছেন।

দ্বিতীয়বারের মতো মেরিন ড্রাইভ আলট্রায় ৫০ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নিয়েছেন ট্রান্সজেন্ডার ইভান আহমেদ (কথা)। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের একটু পর আমি ৫০ কিলোমিটার দৌড় শেষ করতে পেরেছি। এবার আমি আমাদের হিজড়া সম্প্রদায়ের আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসেছিলাম। এখানে একটি বিষয় খুব ভালো লেগেছে. আমাদের প্রতি কোনো বৈষম্য ছিল না। ম্যারাথন রানার হিসেবেই সবাই আমাদের দেখেছেন।’

এবারই এ আয়োজনে দাতব্য তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দৌড়বিদেরা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও এক টাকার শিক্ষা প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। মেরিন ড্রাইভ আলট্রার পৃষ্ঠপোষক প্রাণ-আরএফএল, সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল এলএএফজেড, দি সিটি ব্যাংক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়াকার ফুটওয়্যার, ইগলু আইসক্রিম, ডেটোস ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। অংশীদার হিসেবে ছিল ব্লাড ফ্রেন্ড, নেচার র‌্যাঞ্চ অ্যাগ্রো, অদ্রি, ওপিলজি, ডেভনেট, টায়রা, ফিট অ্যান্ড অয়েল, হেমন্ত রাইডার্স ও কালারিং লিটল স্মাইলস।