সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় ২০ কিলোমিটার গেলে জনপ্রতি যাত্রীর ভাড়া এক টাকা কমবে।
নগরে কিলোমিটারে বাসভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় ২ টাকা ১৫ পয়সা।
নগরে যাত্রীরা স্বল্প দূরত্বে চলেন। তাই ভাড়া কমায় তাঁদের সুবিধা হবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে যাত্রীপ্রতি ভাড়া কমবে ১২ টাকা।
ডিজেলে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ভাড়া কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা কমানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এতে যাত্রীদের কতটা লাভ হবে; বরং সরকার পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধির একটা সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা।
সরকার গত সোমবার জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা ভাড়া কমানোর অর্থ—একজন যাত্রী ২০ কিলোমিটার চললে ১ টাকা ভাড়া কমবে। কিন্তু নগর পরিবহনে বেশির ভাগ যাত্রীই স্বল্প দূরত্বে চলাচল করেন।
এতে ভাড়া কমানোর সুফল তাঁরা পাবেন না। আবার দূরপাল্লার পথে খুচরা নোটের প্রচলন খুব একটা নেই। অর্থাৎ ৫ বা ১০ টাকার কম ভাড়া কমলে দূরপাল্লার যাত্রীরাও সুবিধা পাবেন না।
গতকাল বুধবার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহনমালিক-শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা ভাড়া কমানোর ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
এর আগে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পর দূরপাল্লায় কিলোমিটারপ্রতি ৪০ পয়সা এবং নগর পরিবহনে ৩৫ পয়সা হারে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা এবং দূরপাল্লার পথে ২ টাকা ১৫ পয়সা হবে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন ভাড়ার হার কার্যকর হবে।
এর আগে ২০১৬ সালে ডিজেলের দাম লিটারে তিন টাকা কমানোর পর বাসভাড়া তিন পয়সা কমানো হয়, যা মালিক-শ্রমিকেরা মানেননি।
ভাড়া নির্ধারণে যুক্ত বিআরটিএ সূত্র বলছে, জ্বালানি তেলের দাম অল্প কমালে যাত্রীদের উপকারে আসে না। কারণ, দাম বাড়লে বাসের অন্যান্য খরচ বাড়িয়ে ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। ভাড়া কমানোর প্রশ্ন এলে শুধু জ্বালানির মূল্য হিসাব করে ভাড়া কমানো হয়।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, মহানগর এলাকায় একটি বাস-মিনিবাস এক লিটার ডিজেলে আড়াই কিলোমিটার চলে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। সে হিসাবে ওই পথে একবার যাত্রায় ডিজেল খরচ হয় ২০ লিটার। জ্বালানিতে এখন খরচ হয় ২ হাজার ২৮০ টাকা। পাঁচ টাকা কমায় খরচ হবে ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ১৮০ টাকা। কোনো যাত্রী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাতায়াত করলে আড়াই টাকা ভাড়া কমবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিএ যেভাবে তালিকা করে দেবে, সেভাবেই ভাড়া আদায় করা হবে। কেউ বেশি ভাড়া আদায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। বিআরটিএ যেভাবে ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে, তাতে একটি বাস একবার চট্টগ্রামে গেলে প্রায় ৪০০ টাকা জ্বালানি খরচ কমবে। এই পথের বেশির ভাগ বাস দিনে একবার করে যাওয়া-আসা করে। ফলে ৮০০ টাকা জ্বালানি খরচ বাঁচবে। এই পথে যাত্রীপ্রতি ভাড়া কমবে ১২ টাকা।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, বিলাসবহুল এসি বাস ও মালবাহী যানবাহন ব্যবহারকারীরা আরও বেশি ঠকবেন। কারণ, এই দুই শ্রেণির পরিবহনের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। আবার সাধারণ বাসের চেয়ে এসি বাস ও মালবাহী যানে জ্বালানি খরচও তুলনামূলক বেশি সাশ্রয় হবে। এতে লাভবান হবেন মালিকেরা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরে ৮২ শতাংশ মানুষ ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাসে যাতায়াত করেন। তাঁদের ভাড়া কমবে না। দূরপাল্লায় ৫০ শতাংশ মানুষ ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে যাতায়াত করেন। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া কমবে পাঁচ টাকা, যা কখনোই কার্যকর হবে না।
অবশ্য বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মাহবুব-ই-রব্বানী যাত্রীদের তালিকা দেখে ভাড়া পরিশোধ করার পরামর্শ দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ভাড়া কার্যকরে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে।