মা-বাবা দুজনেই চিকিৎসক। গত সোমবার একসঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন মা ও ছেলে। চার দিনের মাথায় ৯ বছরের ছেলেটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছে না মায়ের।
মা ও বাবা ছেলেকে হারানোর এই শোক কীভাবে সামলাবেন, তা বুঝতে পারছেন না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর শুরু থেকেই মা-বাবা সতর্ক ছিলেন। হাসপাতালে নিতেও দেরি হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি মীর ইসাদ তাসফিনকে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই শিশুটির মৃত্যু হয়।
তাসফিনের বাবা মীর নূর উস সা’দ কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক। মা হালিমা সাদিয়া চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক। নগরের খুলশী এলাকায় থাকে পরিবারটি।
সোমবার মা সাদিয়া ও ছেলে তাসফিনের জ্বর আসে। ওই দিনই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাদের ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। নূর সা’দ এ সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। পরদিন মঙ্গলবার ছেলেকে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার বিকেলে ছেলেকে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান মা-বাবা। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যান তাঁরা। সেখানেও তার অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। বৃহস্পতিবার সকালে মারা যায় তাসফিন।
গতকাল শনিবার নূর সা’দের সঙ্গে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, মা-ছেলে একসঙ্গে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার কোনো ত্রুটি করিনি। ৩ অক্টোবর ছেলেকে মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি। রক্তচাপটা ঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার ফুসফুসে পানি চলে আসে। পরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হয়।
নূর সা’দ বলেন, ‘চেয়েছিলাম ঢাকায় নিয়ে যেতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বুধবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। শেষে ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকেও আমাদের সঙ্গে একটু–আধটু কথা বলেছে ছেলেটি। সকাল ৯টার দিকে চলে গেল।’
এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৭৮ জন মারা গেল। তাঁর মধ্যে ২৮ জনই শিশু।
নূর সা’দের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। ছেলের মরদেহ নিয়ে তাঁরা বৃহস্পতিবারই বাড়িতে চলে যান। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে ছোট্ট তাসফিনকে দাফন করা হয়। আদরের ছেলেকে হারিয়ে মায়ের কান্না যেন থামছে না। বাবা নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সা’দ বলেন, ‘কলকাতায়ও তো গত বছর খুব বেশি ডেঙ্গু হতে দেখা গেছে। তারা সামলে নিয়েছে। আমরা কেন পারছি না? দেশকে সচেতন হতে হবে। তাহলে মানুষ সচেতন হবে। দেশ সচেতন না হলে মানুষ সচেতন হয়ে কী হবে।’
নগরের ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত তাসফিন। তার বড় ভাই সারজিন একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
কয়েক দিনের মধ্যেই চিকিৎসক দম্পতি হয়তো চট্টগ্রামের বাসায় ফিরবেন। সঙ্গে তাঁদের বড় ছেলে মীর সারজিনও ফিরবে। কষ্টটা হয়তো তারই বেশি হবে। তাসফিন তো নেই। এখন থেকে যে ছোট ভাইকে ছাড়াই স্কুলে যেতে হবে সারজিনকে।