দেশে অস্ত্রোপচারে শিশুর জন্ম বাড়ছে। গ্রামের চেয়ে শহরে অস্ত্রোপচার বেশি।
দেশের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোতে ৬৭ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। দরিদ্র পরিবারগুলোতে হার ধনীদের তুলনায় কম। তবে তা-ও অনেক। সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোতে ২৩ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক সেমিনারে ২০২২ সালের জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের এই তথ্য দেওয়া হয়। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।
জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য বলছে, দেশে অস্ত্রোপচারে শিশু জন্ম বাড়ছে। ২০১৭-১৮ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৩৪ শতাংশ শিশুর জন্ম অস্ত্রোপচার হয়। ২০২২ সালের জরিপে দেখা যায়, অস্ত্রোপচারে জন্মহার বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। খুলনা বিভাগে এই হার সবচেয়ে বেশি, ৬৬ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে ৫৩ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, অস্ত্রোপচারে গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে। শহর ও গ্রামে এই হার যথাক্রমে ৫৬ ও ৪০ শতাংশ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও নিপোর্টের মহাপরিচালক মো. শফিকুর রহমান বলেন, ২০২২ সালে দেশে ১৬ লাখ শিশুর জন্ম হয়েছিল অস্ত্রোপচারে। এর মধ্যে ১১ লাখ অস্ত্রোপচারের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার প্রতিরোধ করার জন্য তিনি সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শামস এল আরেফিন বলেন, পরবর্তী স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচিতে বছরে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে শুধু অস্ত্রোপচারের জন্য বছরে খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
২০২২ সালে দেশে ১৬ লাখ শিশুর জন্ম হয়েছিল অস্ত্রোপচারে। এর মধ্যে ১১ লাখ অস্ত্রোপচারের কোনো প্রয়োজনই ছিল না।মো. শফিকুর রহমান, মহাপরিচালক, নিপোর্ট
২০২২ সালের জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের প্রাথমিক তথ্য ১১ এপ্রিল জাতীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়। এরপর ছয়টি বিভাগীয় শহরে জরিপের ফল নিয়ে সেমিনার করে নিপোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় গতকালের সেমিনারটি হয়েছে। সর্বশেষ বিভাগীয় সেমিনার হবে চট্টগ্রামে।
অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন নিপোর্টের পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ আহছানুল আলম ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রায় সমানসংখ্যক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। মাঠপর্যায়ে দুই অধিদপ্তরের কাজের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয় আছে, কিছু ক্ষেত্রে নেই। মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা দুই অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়। সেবাটি একটি অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হলে ফল ভালো হতো।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান বলেন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হলে দুই অধিদপ্তরকে একসঙ্গে, একযোগে কাজ করতে হবে।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জরিপের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এত কাল বলা হয়েছে, জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহারের হার বাড়লে মোট প্রজননের হার কমতে থাকে। কিন্তু সর্বশেষ জরিপে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহারের হার বাড়তে দেখা গেলেও প্রজননের হার কমতে দেখা যাচ্ছে না।
জরিপের তথ্য বলছে, ৬৪ শতাংশ দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করে। ২০১১ সালে পদ্ধতি ব্যবহারের হার ছিল ৬১। ২০১৪ ও ২০১৭-১৮ সালের জরিপে এই হার ছিল ৬২; অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে। কিন্তু কমেনি মোট প্রজননের হার। বর্তমানে দেশে মোট প্রজনন হার ২ দশমিক ৩। আগের তিনটি জরিপেও তা একই ছিল।
অনুষ্ঠানে প্রশ্ন ওঠে, কেন এমন হচ্ছে? উত্তরে আইসিডিডিআরবি ও নিপোর্টের কর্মকর্তারা বলেন, এর উত্তর জানার চেষ্টা চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেখা হচ্ছে। যেসব প্রশ্নের উত্তর এখন দেওয়া যাচ্ছে না, তা দেওয়া হবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে।
এ বছরের নভেম্বর মাসে ২০২২ সালের জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।