দরজায় ঈদ দিচ্ছে টোকা, চলছে কড়া নাড়া
দরজা খোলায় বাসার কারও নেই সে রকম তাড়া।
চোখ ফুলিয়ে কাঁদছে আপু টিস্যুতে নাক ঝেড়ে
এর ভেতরই চলছে বিলাপ হাত-পা-মাথা নেড়ে…
আপু—দরজি কেন এমন হবে! স্বভাব এত বাজে!
ড্রেসই যদি না বানাবি, আছিসটা কোন কাজে?আমিই সবার আগে, মানে রোজার প্রথম দিনে
এত্ত টাকা খরচ করে কাপড় দিলাম কিনে!
‘আজ না আপা, কালকে আসেন! কালকে’ বলে বলে
দেখতে দেখতে দেখতে দেখতে রোজাই গেল চলে!
দরজি এখন ফোন ধরে না! টেইলার্সে তালা!
সামনে পেলে ব্যাটার গলায় দেব জুতার মালা!
চলছে আপুর চোখ মোছা আর বিনবিনিয়ে কাঁদা
দিচ্ছে না কেউ সান্ত্বনা বা দিচ্ছে না কেউ বাধা।
থমথমে মুখ আম্মু আছে মুখ ঘুরিয়ে পুবে
যা ভেবেছি! আম্মু এবার সব্বাইকে ধুবে!
আম্মু—রোজার পরে ঈদটা আসুক, ভেজাল কেন আসে!
বুয়া নিয়ে চিড় ধরেছে সমস্ত বিশ্বাসে।
কালকে থেকে বুয়া উধাও, নেয়নি ছুটিছাটা
বুয়ার ফোনে কল ঢোকে না, বন্ধ? নাকি কাটা!
এসব নিয়ে কথা বলার হচ্ছে না আর রুচি
আমিই এখন বাটব রসুন! করব পেঁয়াজ কুচি!
ভেবেছিলাম মেহেদিতে রাঙাব হাত দুটি!
বাসার সবার ছুটি আছে, আমার কোথায় ছুটি?
ছিঁচকাঁদুনে কন্যা আমার! বলব কিছু ওকে?
সারাটা দিন করছে মাতম ঈদের ড্রেসের শোকে!
মায়ের কাজে হাত লাগালে মায়ের জীবন বাঁচে
পাষাণ মেয়ের বিবেচনায় সেসব কি আর আছে!
নবাব ছেলে, ছেলের বাবা, থাকছে বসে, শুয়ে
ওরা কি আর বাটবে রসুন? প্লেট কি দেবে ধুয়ে?
(ভুল যা হওয়ার হয়েছে তা সেই দুহাজার সালে)
লাগবে না কেউ বাসার কাজে, থাকবে খাওয়ার তালে।
ভুলেও এরা দেয় কখনো রান্নাঘরে উঁকি?
নির্লজ্জ বলেই আমি রান্নাঘরে ঢুকি…
মন্দ কপাল বলেই আমার সঙ্গী পাটা-পুতা!
মিনসে কিনে পারত দিতে একটি জোড়া জুতা!
এই সময়ে মুখ খুলেছে উদাস থাকা বাবা
বাবা—এই গরমে মার্কেটে কি শখ করে কেউ যাবা?
লোকজনেরা ধুড়ুমধাড়ুম হারাচ্ছে জ্ঞান, তাপে
অনলাইনে কিনবে জুতা? মিলবে সেটা মাপে?
কার্পেট যে কিনেছিলে! সেটার ডেলিভারি
পাপোশ দেওয়ায় মনে আছে? তুললে মাথায় বাড়ি!
দেখায় যেটা দেয় না সেটা, রং মেলে না মোটে
কার কথাতে লোকজনে যে অনলাইনে ছোটে!
ঈদ যাবে, ঈদ আসবে আবার, গরম থেকে বাঁচো!
ভেবে বলো, পরের ঈদে ডাবল জুতায় আছ?
আম্মু জবাব দেয় না, বাড়ে পাটা-পুতার ঘষা
আমার কী কাজ? ঘাপটি মেরে ড্রয়িংরুমে বসা!
দরজায় ঈদ দিচ্ছে টোকা, চলছে কড়া নাড়া
চাঁদ উঠলেই দরজা খুলে সবাই দেব সাড়া।