আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দেওয়ার কথা বলার পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির তিন নেতা।
বিএনপির ওই তিন নেতার একজন ওবায়দুল কাদেরকে ‘কেমিক্যাল কাদের’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একজন প্রশ্ন তুলেছেন, কাদেরের রাসায়নিক বিষয়ের জ্ঞান নিয়ে। আরেকজন প্রশ্ন তুলেছেন কাদেরের রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে।
রাজধানীর গাবতলীতে গত সোমবার দলের এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও রিজভীর মাথায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেওয়ার কথা বলেন।
কাদের বিএনপির নেতাদের আন্দোলন-কর্মসূচির হুমকি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইউরেনিয়ামের দুইটা চালান এসে গেছে। পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন।...যে লাফাবে, মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেব। ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করব না, ইউরেনিয়াম মাথায় ঢেলে ঠান্ডা করে দেব।’
বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আওয়ামী লীগের মধ্যে যে কয়জন একটু পড়াশোনা জানা মানুষ, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। আমরা তা-ই জানতাম। তাঁর যে করুণ অবস্থা হয়েছে, তা জানতাম না। তিনি ইউরেনিয়াম কী জিনিস, তা-ই জানেন না।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চার গুণ বেশি পয়সা দিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে তারা নিচ্ছে। কারণটা কী? ওই যে চার গুণ বেশি খরচ, তার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে ওদের কমিশন।’
পদ্মা সেতুতেও চার গুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু ১০ হাজার কোটি টাকাতেই হতো, সর্বোচ্চ। সেটা এখন ৪০ হাজার কোটি টাকা পার হয়ে গেছে। আবার রেললাইন উদ্বোধন করেছে। ভালো কথা। কত টাকায় এটা করেছেন, বলেন? এগুলো বললে ওদের মাথা খারাপ হয়ে যায়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও ইউরেনিয়াম নিয়ে কথা বলেছেন। মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইউরোনিয়াম কত প্রকার ও কী কী আপনি জানেন? এই সম্পর্কে আপনার কোনো জ্ঞান আছে? ইউরেনিয়ামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় একজন মানুষ মারা যেতে পারে। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই—আপনি হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ জেহাদ পরিষদ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘আপনারা টুস করে পদ্মায় ফেলে দেবেন—এটা ভুলে যাইনি। এখন ইউরেনিয়ামের হুমকি দেন। এটা কী শুরু করেছেন? রাজনীতি করেন, রাজনৈতিক কাজকর্ম করেন, রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলেন। শিষ্টাচারের সঙ্গে কথা বলতে শেখেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কেমিক্যাল কাদের বলে অভিহিত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ইরাকে একজন মন্ত্রী ছিলেন, নাম আলী। মনে করা হতো বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র প্রকল্প উনি তত্ত্বাবধান করতেন। তাই তাঁকে সবাই কেমিক্যাল আলী নামে ডাকতেন। এখন দেখি বাংলাদেশেও একজন কেমিক্যাল কাদেরের উদয় হয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে রিজভী আরও বলেন, ‘ইউরেনিয়ামের যে অ্যাটম বোমা গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে, সেই তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম আপনি (ওবায়দুল কাদের) বিএনপির জাতীয় নেতাদের মাথায় ঢেলে দেবেন। আপনি কী করে এটা বলতে পারেন।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই সরকার ও তার মন্ত্রীরা বাংলাদেশে গুম, খুন, গুপ্ত হত্যা—প্রতিটার সঙ্গে যে জড়িত, সেটিরই আলামত বহন করে এই ইউরেনিয়াম ঢেলে দেওয়া। আমরা ইরাকে কেমিক্যাল আলীর কথা শুনেছি। বাংলাদেশে এখন কেমিক্যাল কাদের সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, এই কেমিক্যাল কাদেরদের দিয়ে মানুষকে যে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হবে, গণতন্ত্রকামী মানুষকে যে নিশ্চিহ্ন করা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।