ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বুধবার রাতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস যাচ্ছেন। তিনি আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ইইউ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন। এ সময় অর্থনীতি, জ্বালানি, নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথমবারের মতো ব্রাসেলস সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে ইইউর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেওয়ার ফাঁকে বেলজিয়াম, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসসহ বেশ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মেয়াদে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি জোর দেবেন।
ইইউর ওয়েবসাইটে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের ২৭ দেশের জোটের পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। ২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী ওই বৈঠকে উদ্বোধনী অধিবেশনের পাশাপাশি তিনটি আলাদা গোলটেবিল বৈঠক এবং সমাপনী অধিবেশন রয়েছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতি এবং নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, অভিন্ন সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সহনশীলতা ও বিনিয়োগ এবং পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি রূপান্তর জোরদার—এই তিনটি প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হবে গোলটেবিল বৈঠকগুলো।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ইইউর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অর্থনৈতিক সহনশীলতার বিষয়ে আলোচনা করবেন। এর পাশাপাশি তিনি এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমন্বয়ের বিষয়টিও সামনে আনতে পারেন।
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক জানান, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে নানা উপায়ে অর্থাৎ সড়ক, রেল, নৌ ও সমুদ্রপথে সংযুক্তিতে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনকি উপ–আঞ্চলিক উদ্যোগও আছে। আবার যোগাযোগের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে সঞ্চালন লাইন প্রতিষ্ঠা, পাইপের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ এবং ট্রেনে করে পণ্য সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ইইউর সামনে এ বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারে।
পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে গত বছর ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের সময় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে সহযোগিতার জন্য ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের সঙ্গে ৪০ কোটি ইউরোর একটি চুক্তি সই হয়েছে। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতারও সুযোগ আছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় টিকা কেনার জন্য ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক ২৫ কোটি ইউরো দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ওই অর্থ করোনার টিকা কেনার জন্য খরচ হয়নি। ফলে অব্যবহৃত ওই অর্থ স্বাস্থ্য খাতের কোথায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ইইউ ২০২২ সাল থেকে মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকের আয়োজন করে আসছে। প্রথমবার ফ্রান্সের প্যারিসে ও দ্বিতীয়বার সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হয়েছে মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠক। বিশেষ করে ইইউ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের সহযোগিতার কৌশল প্রকাশের পর এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব জোরদার এবং শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিচ্ছে। ইইউ ২০২১ সালে তাদের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর কৌশল ঘোষণা করেছে।