কবি ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য বহু প্রাণের বিনিময়ে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। এই অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য এখন সেই সরকারের নিয়োগ করা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ মিলনায়তনে ‘দ্য প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল ক্রাইসিস: টুয়ার্ডস আ সলিউশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একটি প্রধান রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায় রাখতে চাইছে। তারা একটা সময় মনে করেছিল যুক্তরাষ্ট্র তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এসব ধারণা যে একেবারে ভুল, তা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
জাতীয় পাসপোর্টে আগে উল্লেখ করা হতো ইসরায়েল ছাড়া সব দেশে ভ্রমণ করা যাবে; কিন্তু বিগত সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে বলে সেমিনারে বিভিন্ন বক্তা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পুনরায় পাসপোর্টে এই নিষেধাজ্ঞার দাবি করেন। ফরহাদ মজহার এই দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি এ দেশের মানুষের এক গভীর হৃদয়াবেগ রয়েছে। তারই প্রকাশ ঘটেছিল পাসপোর্টে ইসরায়েলের প্রতি ওই নিষেধাজ্ঞায়। গত স্বৈরশাসক তা বাতিল করেছে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ইসরায়েল একটি দখলদার বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। গাজায় তারা নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে। কিন্তু ইউরো-মার্কিন শক্তি তাদের প্রতিহত না করে বরং অস্ত্র-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। এটা কেবল আরব-অনারব সমস্যা নয়, এর নেপথ্যে মধ্যপ্রাচ্য তথা সমগ্র বিশ্বেই ইউরো-মার্কিনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রভাববলয় বিস্তারের বিষয়টি জড়িত রয়েছে।
সভায় মূল প্রবন্ধ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল আমিন। প্রবন্ধে তিনি ফিলিস্তিনের দীর্ঘ ইতিহাস ও ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে বলেন, ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার আগপর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তিনি বলেন, অনেক ভাবে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি তিনটি সম্ভাব্য সমাধানের ধারণা উল্লেখ করেন। একটি হলো ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এখানে একটি অভিন্ন রাষ্ট্র হতে পারে। তৃতীয়ত অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার পথ করা যেতে পারে।
আলোচনায় সাবেক সচিব ও কূটনীতিক মসয়ূদ মান্নান বলেন, গাজায় নির্বিচার হাজার হাজার শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এই গণহত্যা বন্ধের জন্য পৃথিবীব্যাপী দৃঢ় ঐক্য ও জনমত গড়ে তুলতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। সেই সংহতি কমিটিতে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করে ইসরাইলের বর্বরতা বন্ধে জোর দাবি তুলতে হবে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম, মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশীদ, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র দাস, গণ আজাদী লীগ একাংশের সভাপতি আতাউল্লাহ খান, গণ অধিকার পরিষদের একাংশ সদস্যসচিব ফারুক হাসান, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ইফতেখার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব মোহাম্মদ ইয়ারুল ইসলাম।