বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও ডেঙ্গুতে মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।
এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ব্রাজিলে। আর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশে মৃত্যুহারও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাদানকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইসিডিসি) ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।
দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে বরাবরের মতো এ বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। ইসিডিসি ২ অক্টোবর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছে এমন যে ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে ৭টিই দক্ষিণ আমেরিকার। এর মধ্যে আছে ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, নিকারুগুয়া ও কলম্বিয়া। তালিকার বাকি তিনটি দেশ এশিয়ার। বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইন।
ডেঙ্গুতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মৃত্যু বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যাচ্ছে না। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায় চলতি বছর একমাত্র বাংলাদেশেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। সমস্যা এই যে বাংলাদেশে ডেঙ্গু মৌসুম এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু অনেক দেশে মৌসুম শেষ হয়েছে।আইইডিসিআর পরামর্শক ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন
বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও ডেঙ্গুতে মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। গত বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও দুই থেকে তিন মাস থাকবে। অর্থাৎ ডিসেম্বরে শীতের মধ্যেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে বলে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে জনস্বাস্থ্যবিদদের একটি অংশ আশা করছেন, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি ডেঙ্গু সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। সংক্রমণ কমে আসার পাশাপাশি মৃত্যুও কমে আসবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মৃত্যু বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যাচ্ছে না। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায় চলতি বছর একমাত্র বাংলাদেশেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। সমস্যা এই যে বাংলাদেশে ডেঙ্গু মৌসুম এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু অনেক দেশে মৌসুম শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে গত বছর অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুম আরও প্রলম্বিত হচ্ছে।আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন
এ বছরের শুরুর দিক থেকে ব্রাজিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। দেশটির ডেঙ্গু পরিস্থিতি জানার জন্য প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক ব্রাজিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস প্রথম আলোকে গত বুধবার জানিয়েছে, ২১ আগস্ট থেকে ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য প্রকাশ বন্ধ করেছে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর ওই তারিখ পর্যন্ত ব্রাজিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৯২০ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ২ হাজার ৩২৭ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩১ জন। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও অনেক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। তাঁদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না, সরকারি তরফে জানার কোনো চেষ্টাও নেই।
সরকারের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ দুই শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে।
অন্যদিকে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে কন্ট্রোল রুম। এ নিয়ে এ বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১৩৫ জন।
ব্রাজিলে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় মার্চ মাসে এবং শেষ হয় জুন মাসে। আগস্ট আসতে আসতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মৃত্যু কমে যায়।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে গত বছর অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুম আরও প্রলম্বিত হচ্ছে।
ব্রাজিলের পর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি। ইসিডিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এ বছর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে মারা গেছেন ৪২৪ জন। মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
আর্জেন্টিনাতে ১ লাখ ২২ হাজার ৬০৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৫ জন। দেশটিতে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বলিভিয়াতে মৃত্যুর সংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৯৩৮ জন, মারা গেছেন ৮৩ জন। মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বর্ন ডিজিজেস কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে ৯৪ হাজার ১৯৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯১ জন। প্রতিবেশী দেশটিতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বের সব দেশের তুলনায় ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দেশটিতে মারা গেছেন ৯২০ জন। মৃত্যুহার শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। সরকারের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ দুই শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, এত বেশি মৃত্যুহার বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যাচ্ছে না।