থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশের এডিসি হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটিও। পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অথচ বারডেমে হারুন অর রশিদের ওপর ‘হামলাকারী’ রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্রলীগের নেতাদের মারধরের ঘটনায় পুলিশ বিব্রত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় মামলা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁকে চাকরিচ্যুতও করা হতে পারে। হারুন ছাত্রলীগ নেতাদের থানায় এনে মারধর করে যেমন শাস্তি পাচ্ছেন, তেমনি জনপ্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আজিজুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গত মঙ্গলবার বলেছেন, এই ঘটনার সূত্রপাত করেছেন রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক। তিনি এডিসি হারুনের ওপর হামলাটি করেছেন। এটার তদন্ত হওয়া উচিত।
ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে এপিএস আজিজুল হকের স্ত্রী ডিএমপির এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সানজিদা আফরিনও চ্যানেল আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি চিকিৎসা নিতে গত শনিবার সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে তিনি সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুন অর রশিদের সহায়তা নেন। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে এডিসি হারুনকে মারধর করেছেন তাঁর স্বামী আজিজুল।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ বিষয়ে আজিজুল হক কোনো বক্তব্য দেননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) আবদুস সবুর মণ্ডল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গণমাধ্যমে খবর দেখে বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন। তবে আজিজুল হকের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি (ডিএমপির পক্ষ থেকে) করা হয়েছে। তারা যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের নেতাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে ডেকে নেন। তিনি বারডেম হাসপাতালে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে এডিসি হারুনকে দেখতে পেয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ ডেকে ছাত্রলীগের নেতাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম মারধর করা হয়।
থানায় মারধরের ঘটনায় ডিএমপির গঠন করা তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল গতকাল। তবে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় প্রতিবেদন জমা দিতে গতকাল আরও পাঁচ দিনের সময় বাড়িয়েছে ডিএমপি।
থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের ঘটনাকে ‘জঘন্য’ উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক। তিনি বলেন, হিন্দি সিনেমার মতো কোনো একজন কর্মকর্তা ছাত্রলীগের নেতাদের থানায় নিয়ে সাত–আটজনে মিলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করেন। এটা সিনেমাকে হার মানিয়েছে। এটা অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা। তিনি বলেন, ‘পুলিশের হেফাজতে নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিককে নির্যাতন করে, তা–ও সরকার দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের নির্যাতন করে, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবস্থাটা কী?’
এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, শুধু তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলে সুবিচার হবে না। সুবিচার হবে ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে বিচার করে সাজার ব্যবস্থা করা হলে।
বিরোধীদের বক্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, যে পুলিশ কর্মকর্তার কথা বলা হয়েছে, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে নন। তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ এ ঘটনায় মামলা করেনি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।