এম এন লারমা দেশের শোষিত, নিপীড়িত ও মেহনতি মানুষের অধিকারের কথা বলিষ্ঠভাবে উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সব মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে। সংক্ষিপ্ত পরিসরের হলেও একটা জীবন যে এতটা বর্ণাঢ্য হতে পারে, সেটা তাঁর জীবন ব্যতীত খুব একটা দেখা যায় না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমার ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এভাবেই স্মৃতিচারণা করলেন বক্তারা। আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো শুক্রবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এ সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় এম এন লারমার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সভাপতি সুলভ চাকমা বলেন, এম এন লারমার লড়াই–সংগ্রাম ও জীবনাদর্শ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তিনি সব শোষিত, নিপীড়িত ও মেহনতি মানুষের অধিকারের কথা বলিষ্ঠভাবে উচ্চারণ করেছিলেন। এমনকি তাঁর পিতা, পিতামহ ও পরিবারের সদস্যরা পার্বত্য চট্রগ্রামের জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন, আত্মত্যাগ করেছিলেন।
পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা দীপায়ন খীসা বলেন, এম এন লারমার জীবন মাত্র ৪৩ বছরের। এত সংক্ষিপ্ত পরিসরের একটা জীবন এতটা বর্ণাঢ্য হতে পারে, সেটি তাঁর জীবন ব্যতীত খুব একটা দেখা যায় না। তিনি নারীদের কথা চিন্তা করেছেন। এই আদর্শ লালন করেছেন বলেই এম এন লারমা জুম পাহাড়ে নারীদের নিয়ে গেরিলা বাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
লেখক ও সাংবাদিক নজরুল কবীর বলেন, এম এন লারমা সব নিপীড়িত মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, সব মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে। যারা এই মুক্তির লড়াইকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, তিনি তাদের চিহ্নিত করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি কোনো দয়ার দান ছিল না। অনেক জুম্ম জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই চুক্তি। আর এই আন্দোলন তথা জুম্ম জাতির লড়াই শুরু করেছিলেন এম এন লারমা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, এম এন লারমা শুধু জুম্ম জনগণের সংগ্রামের প্রতীকই নন। তিনি এ ভূখণ্ডের অধিকারবঞ্চিত সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। এম এন লারমা তাঁর কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছিলেন। সাধারণ জনগণের কাছে আন্দোলনের বীজ বপন করেছিলেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস, হিল উইমেনস ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা প্রমুখ।
পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমার সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চ্যং ইয়ং ম্রো।