আহত এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত ৪ আগস্ট কুমিল্লার দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায়
আহত এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত ৪ আগস্ট কুমিল্লার দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায়

নিহতের ওয়ারিশ, গুরুতর আহত ব্যক্তি সহায়তা পাবে  

সহায়তার নীতিমালা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মিথ্যা তথ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘর্ষ–সহিংসতায় নিহত ব্যক্তির আইনসম্মত ওয়ারিশ, গুরুতর আহত ও স্থায়ীভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে সরকার সহায়তা দেবে। সহায়তার জন্য তহবিল গঠন করা হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

‘২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সহায়তা প্রদানের জন্য নীতিমালা’তে এ কথা বলা হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর এই নীতিমালার খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ আগস্ট ‘সাম্প্রতিক ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা এ শহীদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিস্থিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন’ করতে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে। সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির এই কমিটির আহ্বায়ক।

কমিটি নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি হতাহতদের একটি খসড়া তালিকাও তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আট বিভাগে মোট ১৮ হাজার ২৪৭ জন আহত ব্যক্তি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৬২২ জন। প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন ৫২৫ জন। এ ছাড়া চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন ৬৪৭ জন। কমিটির পরামর্শে এই তালিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই কার্যক্রম চলমান আছে।

 নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তা নীতিমালা প্রসঙ্গে কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাজটুকু আমরা করেছি। এই নীতিমালা এখন অনুমোদন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। তারপর এর বাস্তবায়নের বিষয়টি সামনে আসবে।’

তহবিল গঠন ও অর্থায়ন

১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনের সময় আঘাত পাওয়া যেসব ব্যক্তি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁরা তালিকাভুক্ত হবেন। আহত হয়েছেন কিন্তু যুক্তিসংগত কারণে ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেননি, তাঁদের এ বিষয়ে প্রমাণ দেখাতে হবে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যাচাইয়ের মাধ্যমে তাঁদের তালিকাভুক্ত করা হবে।

পূর্ণাঙ্গ তথ্যের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, হাসপাতালের ছাড়পত্র ব্যবহার করা হবে। তথ্য হালনাগাদ করার জন্য ছাত্র প্রতিনিধিদের সহায়তা নেওয়ার কথাও নীতিমালায় বলা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে আঘাতের কারণে ওই সময় বা পরবর্তী
সময়ে শহীদ ব্যক্তির আইনসম্মত ওয়ারিশেরা সরকারের সহায়তা পাবেন। একই সময়ে আহত ও স্থায়ীভাবে অক্ষম ব্যক্তি এই সহায়তার আওতায় আসবে। মেডিকেল বোর্ড কোনো আহত ব্যক্তিকে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দেওয়ার সুপারিশ করলে সুপারিশ অনুযায়ী তিনি চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রত্যেকের একটি স্বাস্থ্য কার্ড থাকবে।

তহবিল সংগ্রহের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তহবিলের উৎস হবে: সরকারের অনুদান, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির আওতায় বা অন্যভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুদান, দেশের যেকোনো নাগরিকের দান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দান ও উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদান।

তাঁরা জানেন না সরকার কী করছে

হাফেজ মোহাম্মদ হোসাইন আহমদের চিকিৎসা চলছে রাজধানীর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুলি লেগেছিল হাতে। তাঁর জীবন রক্ষা করতে ডান বাহু কেটে ফেলে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

মোছাম্মত শাহনূর বেগমের চার ছেলের মধ্যে হাফেজ মোহাম্মদ হোসাইন আহমদ তৃতীয়। তাঁদের মূল বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিনে। স্বামী মারা গেছেন। এখন চার ছেলে নিয়ে থাকেন ডেমরা এলাকায়। বড় ছেলে পোশাক কারখানায়, মেজ ছেলে মশারির কারখানায় চাকরি করেন। হাফেজ মোহাম্মদ হোসাইন আহমদ জুলাই মাসে প্রথম একটি চাকরিতে যোগ দেন। ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

গতকাল রোববার হাসপাতালে শাহনূর বেগম ও হাফেজ মোহাম্মদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। শাহনূর বেগম বলেন, তাঁর ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে আন্দোলনে ছিল। ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার হাতে গুলি লাগে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখান থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এবং পরে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। এই তিন হাসপাতালে তাঁদের ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। একপর্যায়ে ২২ আগস্ট তাঁরা ইবনে সিনা হাসপাতালে চলে আসেন।

ছেলের চিন্তায় কাহিল হয়ে পড়েছেন শাহনূর বেগম। সরকারের করা আহতের তালিকায় ছেলের নাম উঠছে কি না, তা তিনি জানেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনতাছি, সরকার সাহায্য কোরবো। আমরা কি পাব? আমরা কেমনে তা পাব?’