ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবও ইতিবাচক। সবকিছু ঠিক থাকলে এই কাজ পেতে পারে জাপান। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকাজের একটি অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর পথ দেখিয়ে পার্কিং বে–তে নেওয়া, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালামাল ওঠানো-নামানো, উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
দেশের সবগুলো বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস করছে। এই খাত থেকে বিমান বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করে বলে সূত্র জানায়। তবে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বেশি দূর এগোয়নি। এর মধ্যে দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানিকে এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি মহল অনেক বছর ধরে সক্রিয় ছিল। মহলটি এখন নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাওয়ার জন্য সক্রিয় আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বেবিচক সূত্র বলছে, এই টার্মিনালের নির্মাণ খরচের একটা বড় অংশই দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এর ফলে টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে জাপানের আগ্রহের বিষয়টিকে সরকার ইতিবাচকভাবে দেখছে। এই আগ্রহকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বেবিচক সূত্র আরও বলছে, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) টার্মিনালটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়া হবে।
মফিদুর রহমান আরও বলেন, জাপান কীভাবে কাজটি করবে, আর্থিক-সংশ্লিষ্টতা কী হবে, সেবা কীভাবে দেওয়া হবে—এসব বিষয়ে তিনটি পৃথক সমীক্ষা হচ্ছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ, বেবিচক ও জাপান পৃথকভাবে সমীক্ষাগুলো করছে। এগুলো শেষ হতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে। তারপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী অক্টোবরে টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন বেবিচকের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান। আর আগামী বছরের শেষ দিকে টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ কে করবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগপর্যন্ত তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেবিচক পালন করবে বলে জানান মফিদুর রহমান।