বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। প্রতি ইউনিটে গড়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১তমবারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। নতুন দাম জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিইআরসি। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। ১৪ বছরে এটি ছিল দশম দফায় পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি। এরপর ডিসেম্বর থেকেই খুচরা দাম বাড়াতে বিইআরসির কাছে আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। ৮ জানুয়ারি এসব আবেদন নিয়ে শুনানি করে বিইআরসি। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শুনানি-পরবর্তী মতামত জানাতে বলা হয়। এরপর নতুন দাম ঘোষণা করার কথা বিইআরসির। তার আগেই সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো হলো।
দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সংশোধনের সময় বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে দাম বাড়াবে সরকার। এরপর আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো সরকার এ ক্ষমতার প্রয়োগ করল।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, সরকার তার আইনি ক্ষমতায় দাম বাড়িয়েছে। এখানে কমিশনের কিছু বলার নেই। তবে কমিশনের শুনানি যেহেতু হয়েছে, একটা আদেশ ঘোষণা করতে হবে। ১৫ জানুয়ারি কমিশন সভা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে বিতরণ সংস্থার কাছে ৬ টাকা ২০ পয়সায় বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। আর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বর্তমান দাম গড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা। ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি চেয়েছিল বিতরণ সংস্থা।
তবে গড়ে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করেছিল তারা। এখন এটি ৭ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের মার্চে খুচরা দাম বাড়িয়েছিল বিইআরসি।
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা করছে। গত অর্থবছরেও মুনাফা করেছে বিতরণ সংস্থাগুলো।
বিতরণ সংস্থার মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পিডিবি, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ক্ষেত্রে কিছু মুনাফা ধরে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ক্ষেত্রে মুনাফা ধরা হয় না। তবে নতুন প্রজ্ঞাপনে সব সংস্থার জন্য একই মূল্যতালিকা প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
আজ সন্ধ্যায় জারি করা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপনের কোনো বিধানের ব্যাখ্যা বা কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে তা বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠাতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। বিদ্যুতের নতুন বিল হার ও বিবিধ সেবার ফি জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।