পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আলোচকেরা। আজ রাজধানীর ধানমন্ডিতে উইমেনস ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আলোচকেরা। আজ রাজধানীর ধানমন্ডিতে উইমেনস ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে

পাহাড়ে বৈষম্য দূর করতে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দরকার

পাহাড়ের বৈষম্য দূর করতেই শান্তিচুক্তি (পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি) হয়েছিল। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পাহাড়ে এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে। আজ যখন দেশের মানুষ একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের, সবার জন্য সম অধিকারের স্বপ্ন দেখছে, সেই পরিস্থিতিতে পাহাড়িদের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দূর করতে চাইলে শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন জোরদার করুন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আলোচকদের কথায় উঠে এল এসব বিষয়। আজ রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে উইমেনস ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সরকারের সঙ্গে এ চুক্তি করে জেএসএস।

সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদক সাজেদুল হক বলেন, যখন শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তখন আশা ছিল পাহাড়ে শান্তি ফিরবে। পাহাড়ের মানুষ সুখেশান্তিতে বসবাস করতে পারবে। তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে। পাহাড়েও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেসব হয়নি। পাহাড়ে ভূমি সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে যে স্বাধীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের কথা ছিল, চুক্তির ২৭ বছরেও ওই পরিষদের নির্বাচন হয়নি। নামকাওয়াস্তে চুক্তির কিছু বিষয় উপরি উপরি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র।

চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের উল্লেখ করে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা দিনকে দিন সংখ্যায়, শক্তিতে ও শনাক্তে আরও প্রান্তিক হচ্ছে। বাঙালি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র এ কাজটি করে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয়ে বিরোধ থাকলেও আদিবাসীদের অধিকারের প্রশ্নে দলগুলোর অবস্থান এক, কীভাবে দখল করা যায়। ডিসেম্বরে হওয়া দুটি চুক্তি, শান্তি ও মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার বিজয়ের চুক্তি—উভয় চুক্তিই ম্লান হতে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পাহাড়িদের নিজেদের মধ্যে আত্মঘাতী অবস্থান থেকে সরে এসে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে আনলে ২৭টিও বাস্তবায়িত হয়নি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, এত কমিশন  হলো, কিন্তু আদিবাসী বা প্রান্তিক গোষ্ঠী যারা বৈষম্যের শিকার হয়, তাদের জন্য কোনো কমিশন এ সরকার গঠন করল না। আর যেসব কমিশন হয়েছে, সেখানে দলিত, আদিবাসী, প্রান্তিক গোষ্ঠী, শ্রমিকদের জায়গা কোথায়? তাদের অংশগ্রহণ কোথায়? তাহলে কিসের বৈষম্য বিলোপ করা হবে।

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্যসচিব তারিক হোসেন বলেন, ২ ডিসেম্বরকে ভেবেছিলাম পাহাড়ি তথা সারা দেশের মানুষের জন্য আনন্দের, বিজয়ের দিনে পরিণত হবে। কিন্তু দিন দিন এ দিবসটি ক্ষোভ–বিক্ষোভের দিবসে পরিণত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসভাপতি অজয় এ মৃ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ত্রিজিনাদ চাকমা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় অংশ নেন আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা প্রমুখ। বিভিন্ন আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।